অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের উৎসব ঈদুল ফিতরের পর এবার ঈদুল আজহাতেও চট্টগ্রামের গণপরিবহনে চলছে । এরমধ্যে শহরের যেকোনো স্থানে ওঠানামায় ১০ টাকা এবং শহরের বাইরে দূরপাল্লায় তিনগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় চলছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নোয়াগাঁও পৌর এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন জানান, কোরবানির ঈদের তিন দিন পর শনিবার সকালে তিনি রাঙ্গুনিয়া কর্ণফুলী জুট মিল গেট থেকে চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে আসেন। মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরত্বে তার কাছ থেকে ভাড়া নেন ১০০ টাকা। কিন্তু ঈদের আগে ভাড়া নেয়া হতো ৩৮ টাকা।

তিনি বলেন, এ সড়কে লোকাল বাস বলতে কিছুই নেই। প্রকৃত অর্থে সব বিরতিহীন বাসই লোকাল বাস। চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান বাস স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল পর্যন্ত মাত্র ২৮ কিলোমিটার সড়কে ৩৮ টাকা ভাড়া নির্ধারিত ছিল। এরমধ্যে সড়কের এক কিলোমিটার আগে থেকে যাত্রী ওঠলেও ৩৮ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো। হোক সিটে বসে বা দাঁড়িয়ে। কিন্তু ঈদের দিন বুধবার সকাল থেকে সে ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ টাকায়। এ নিয়ে যাত্রীরা আপত্তি করলে বাস চলাচল বন্ধের হুমকি দেয় চালক ও সহকারীরা। যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবে তিনগুণেরও বেশি আদায় করা হলেও দেখার কেউ নেই।

একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা এলাকার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, রাউজান উপজেলা বাস স্টেশন থেকে যে ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর বাস স্টেশনে আসতাম তার চেয়ে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে আসতে হচ্ছে এখন। ঈদের দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন পরও গণপরিবহনে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব দেখার কি কেউ নেই।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে শত শত যাত্রীদের মুখেও দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায়ের আক্ষেপ। শনিবার দুপুরে নগরীর শাহ আমানত গোল চত্বরে চন্দনাইশ উপজেলার বাঁশবাড়িয়া থেকে আসা কামাল উদ্দিন জানান, ৪৫ টাকা ভাড়ার স্থলে ৯০ টাকা ভাড়া আদায় করছে বাসগুলোতে। একইহারে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে সবরকম যানবাহন। প্রতিবাদ করলে বাস চালানো বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। এতে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কারো কোনোরকম তদারকি নেই।

এদিকে, শহরের মধ্যেও একই অবস্থা। সরকার যেখানে এক কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামায় ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে এখন ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ৭ টাকা বা ৮ টাকা ভাড়ার স্থলে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যেখান পর্যন্ত ৪০ টাকা ভাড়া সেখানে ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান সড়ক কালুরঘাট-শাহ আমানত বিমান বন্দর সড়কের ২০ কিলোমিটার দূরত্বে ২০ টাকা ভাড়ার স্থলে নেয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। এভাবে বহদ্দারহাট থেকে স্টেশন রোড সড়ক, বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর সড়ক, জিইসির মোড়-একেখান সড়ক, পাহাড়তলি-দেওয়ানহাট মোড় সড়ক, সদরঘাট রোড, পতেঙ্গা-হালিশহর সড়কসহ সবকটি সড়কের যেকোনো মোড়ে এখন কান পাতলে শোনা যায়-ওঠানামা ১০, ওঠানামা ১০।

আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় শহরের যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক ও সহকারীরা প্রায়ই ঝগড়া করতে দেখা গেছে। এমনকি প্রতিবাদকারী যাত্রীকে হেনস্থা করে বাস থেকে নামিয়ে দিতেও দ্বিধা করছে না। প্রতিবাদকারী যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে যাবে না বলে সব যাত্রীদের নামিয়ে দিতেও দেখা গেছে।
ভাড়া বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে কালুরঘাট-শাহ আমানত বিমান বন্দর ১০নং সড়কের বাস চালক আকাশ বলেন, ঈদ উপলক্ষে একটু বেশি নিচ্ছি।

কাপ্তাই সড়কের বিরতিহীন বাস সার্ভিসের চালক মো. হারুন মোল্লা বলেন, ঈদে বন্ধের দিনে গাড়ি চালাচ্ছি। তাই বেশি ভাড়া নিচ্ছি।

মুরাদপুরে অবস্থিত চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাহাড়িকা বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ঈদে বাস সার্ভিস বন্ধ। যাত্রীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে বাস চালাচ্ছি আমরা। ঈদের বন্ধে যাত্রীও একটু কম। তাই ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে।

বাস শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি হাজি রুহুল আমিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে গণপরিবহন বন্ধের কোনো ঘোষণা নেই। শ্রমিকদের ছুটি থাকতে পারে। এছাড়া ঈদে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়েরও কোনো সিদ্ধান্ত নেই। এ বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031