যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় তাদের। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই। ফিরতি বাস দেরিতে আসায় সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে হরহামেশায়। তীব্র গরম আর যানজটে নাজেহাল অবস্থা যাত্রীদের। কোন কোন রুটে সড়কের বেহাল দশাও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। এদিকে ট্রেনযাত্রীরা স্বস্তিতে নেই।

নিধৃারিত ট্রেনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে আজও নদী পারের অপেক্ষায় আটকে আছে প্রায় ৫ শতাধিক যানবাহন। সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিআইডব্লিউটিসি এ তথ্য জানিয়েছে। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যহত হওয়ায় যানবাহন পারাপারে দ্বিগুন সময় লাগছে। আর এতেই এ সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীমুখি পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়া প্রান্তে যানবাহনকে সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হচ্ছে। চালকরা জানান, তারা অনেকে মধ্যরাত বা ভোরের দিকে দৌলতদিয়া প্রান্তে এসে আটকা পড়েছেন। প্রচণ্ড গরমে যাত্রী ও তারা অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন। এদিকে নদী পারের আপেক্ষায় আটকে থেকে সময়মতো ঢাকায় পৌঁছতে পারছে না গাড়িগুলো। ফলে ঢাকা থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, লাখ লাখ টাকার গরু নিয়ে তারা একটু লাভের আশায় ঢাকায় যাচ্ছেন। কিন্তু দৌলতদিয়া প্রান্তে এসে ফেরির জন্য এই গরমে গরু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। ফলে গরুগুলোও গরমে কষ্ট পাচ্ছে।
এদিকে সায়দাবাদ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত পৌঁছতেই লেগে যাচ্ছে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। অথচ স্বাভাবিকভাবে এটি মাত্র ৩০-৪০ মিনিটের পথ। মূলত স্বল্প ট্রাফিক উপস্থিতি, মেঘনা টোল প্লাজায় টোল নেয়ায় ধীরগতি, ওজন স্কেলের অব্যবস্থাপনা এবং চালকদের নিয়ম অমান্য করে ওভারটেকিংয়ের চেষ্টার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। গত তিন দিন ধরে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জসহ এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ২০-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট লেগে আছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণগুলোর মধ্যে সড়ক সংস্কার, অটোরিকশা-ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য এবং হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতিকে দায়ী করছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া গাজীপুরে বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে ৭ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকাও যানজটের জন্য দায়ী।
অপরদিকে ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন আজ রোববারের ট্রেনের শিডিউলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা গেছে। প্রতিটি ট্রেন দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ছে। নির্দিষ্ট শিডিউল থাকলেও এখনও অনেক ট্রেন স্টেশনে পৌঁছায়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো হাজারও মানুষ। অন্যদিকে স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেনের ধীরগতি আর দেরিতে স্টেশনে পৌঁছানোর কারণে দেরিতে কমলাপুর ছাড়ছে ট্রেন। রোববার দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় ৭টার পর। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে গেছে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। দিনাজপুর চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ১০টা পর্যন্ত স্টেশনে দাঁড়ানো ছিলো। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ১০টা পর্যন্ত স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। দিনাজপুর অভিমুখী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও এখনও স্টেশনে পৌঁছায়নি। তবে একতা এক্সপ্রেসের সম্ভাব্য ছাড়ার সময় দেয়া হয়েছে ১১টায়। অন্যদিকে ঈদ স্পেশাল ট্রেন ৯টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটা ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে ১১টা ৪০ মিনিটে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, কোনো ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে না। তবে ধূমকেতু, সুন্দরবন, নীলসাগর দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে আসায় যাত্রা কিছুটা দেরিতে হয়েছে। অন্য ট্রেনগুলোও দেরিতে রান করায় এখনও স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়। তিনি বলেন, ঈদের সময় যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনে ধীরগতি থাকে। আবার সব স্টেশনে দুই/এক মিনিট বেশি সময় প্রয়োজন হয় যাত্রী নামানোর জন্য।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031