মানুষ জানতে চায়, মানুষ সমাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়। আর সেখানেই গণমাধ্যমের ভূমিকা। গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যম নাগরিকের অধিকার রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে তথ্য জগতে তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে।  নীতিনির্ধারক, আইনসভাসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ ঘটাতে ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয় দেশের আর্থ–সামাজিক অবস্থা। গণমাধ্যম পথ চলে গণমানুষের সঙ্গে। গত ৪৬ বছরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক সংগ্রামের সঙ্গে তার স্বাধীনতা টিকিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যম নানা ঐতিহাসিক ঘটনায়, মানুষের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থেকেছে। দুর্নীতি, সহিংসতার ইস্যুকে অনেক সময় গণমাধ্যমই সবার আগে মানুষের কাছে নিয়ে এসেছে। গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। গণমাধ্যম আছে বলেই পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে আমরা তা মুহূর্তেই জানতে পারছি। বহু দূরে ঘটেও সব কিছুই যেন ঘটছে আমাদের চোখের সামনে। তা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র গণমাধ্যমের কল্যাণেই। কিন্তু এই গণমাধ্যম আমাদের জন্য যেমন ইতিবাচক তেমনি নেতিবাচক। তাই মানুষ হিসেবে নিজের বিচার–বুদ্ধি দিয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণমাধ্যমের কোনো দিকগুলো দ্বারা আমরা প্রভাবিত হব। মাদক–চোরাচালান বন্ধে সেই গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।

মাদক সমস্যা তথা মাদক দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও অবৈধ পাচার একটি জটিল, বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও চোরাচালান সমস্যা দেশ–কাল, ধর্ম–বর্ণ, সমাজ নির্বিশেষে আজ সারা বিশ্বকে গ্রাস করছে। ধনী–দরিদ্র, উন্নত–উন্নয়নশীল কোন দেশই মাদক সন্ত্রাস থেকে মুক্ত নয়। মাদককে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, সংঘাত–দ্বন্দ্ব, কলহ, দুর্ঘটনা, ধ্বংস ও মৃত্যুর যে খেলা চলছে তাকে নিবারণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তি আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গন যথা– স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।

তাই মাদক ব্যবসায়ী, মাদক বহনকারী ও মাদকসেবী–সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ইয়াবার মতো মাদক মানুষকে ধ্বংস করছে, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ককে নষ্ট করছে। মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশ, সমাজ ও তারুণ্যকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাদক বিরোধী মানববন্ধন করা যেতে পারে। এতে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড–এ মাদক বিরোধী স্লোগান বর্ণিত থাকবে। ‘মাদকমুক্ত সমাজ আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী লিফলেট বিতরণ করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক বিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে হবে। অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাদক বিরোধী পরামর্শ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে হবে।

মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম এসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে এগিয়ে এলে মাদক নিয়ন্ত্রণের লড়াই আরো সহজ হবে। মাদকের বিস্তার রোধের লক্ষ্যে সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিতে হবে। মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। মাদকের ব্যবহার ও পাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা, আইনের ফাঁকফোকর বন্ধের বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবন থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। প্রতিটি পরিবারপ্রধানকে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পারিবারিক অনুশাসন, নৈতিক মূল্যবোধ ও সুস্থ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। এই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ভূমিকা নিতে পারে গণমাধ্যম। জনগণকে প্রাণঘাতী নেশার ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তথ্য প্রদান করতে হবে। ‘মাদক যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে এবং আমরাই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করব সৃজনশীলতা, কল্যাণ, শান্তি ও সৌন্দর্যের জন্য’–এটাই হোক আমাদের মূলমন্ত্র!

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031