ভোগান্তিতে চট্টগ্রামমুখী ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী দূরপাল্লার হাজার হাজার যাত্রী ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম জেলা অংশে কোন প্রকার যানজট না থাকলেও কুমিল্লা এলাকার অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার জুড়ে যানজটে । আটকা পড়েছে আসন্ন কোরবানী ঈদের জন্য আনা পশুবাহী শত শত গাড়ি।
ভুক্তভোগীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় মেঘনা–গোমতী সেতুর দুই পাশে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে থেমে থেমে চলছে গাড়ি। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকাল থেকে এই যানজট শুরু হয়ে পরবর্তীতে তার আকার দীর্ঘ হতে থাকে। যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিক আন্দোলনের জের ধরে ও পরবর্তীতে মহাসড়কের উপর বসা হাটবাজারগুলো থেকেই যানজটের সৃষ্টি হয়ে এখন অন্তত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের মধ্যে মহাসড়কের কুমিল্লা দাউদকান্দি মেঘনা–গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা থেকে চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার অংশে ১০ কিলোমিটার যানজট লেগে আছে। রাতে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত যানজট অব্যাহত ছিল। তবে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম আশা করছেন শুক্রবার এর অবসান হতে পারে।
যানজটের কবলে আটকা থেকে ছুটে আসা চট্টগ্রামগামী ইউনিক পরিবহনের যাত্রী নজরুল ইসলাম জানান, কুমিল্লায় দীর্ঘ যানজটে আটকে আছে শত শত যানবাহন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ঈদের বাজারে আনা– নেওয়া পশুবাহী যানবাহনগুলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পশুর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। খাদ্য নিয়েও চিন্তায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। মীর হোসেন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি মহাসড়ক দিয়ে ফেনী থেকে মীরসরাই আসছিলাম, মিঠাছরার উত্তর পার্শ্বস্থ স্থানে সড়কের পাশেই একটি মৃত গরু বেপারীদের রেখে যেতে দেখেছি। এই যানজটের কারণে পথেই ওই গরুর মৃত্যু হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা।
যানজটের কবলে পড়ে মহাসড়কে আটকা পড়েছে শত শত পশুবাহী গাড়ি। যেগুলো চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসছেন।
ঢাকাগামী যাত্রী ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিন জানান, তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন গতকাল ভোরে। তিন ঘণ্টায় কুমিল্লা পৌঁছে যান। কিন্তু সেখানেই গাড়িতে সাড়ে ৪ ঘণ্টা বসে ছিলেন। বিকাল নাগাদও তিনি ঢাকা পৌঁছাতে পারেন নি।
বারইয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ঈদ এলে আমাদের বিকিকিনির পরিমাণটা একটু বাড়ে। কিন্তু ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে গত কয়েকদিনের দীর্ঘ যানজটের কারণে ঢাকা যেতে পারছি না। ঈদের জন্য নতুন পোশাক আনতে পারছেন না।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেঘনা সেতুর কাছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা কিছুক্ষণের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করলে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। মঙ্গলবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট দীর্ঘ আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের মেঘনা–গোমতী ও মেঘনা সেতুর উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে পণ্যবাহী যানবাহনও বেড়ে গেছে যার প্রভাব পড়ছে সড়কে। আর হাটবাজারগুলোতে যান ও জনজট তার উপর সড়কের সংকীর্ণতা এর জন্য অনেকটা দায়ী। এদিকে যানজটে আটকা পড়ে শতশত যানবাহনের হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে। আশা করছি শুক্রবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।