মৌলভী জহির অবশেষে ২ লক্ষাধিক ইয়াবাসহ ঢাকায় আটকের ঘটনায় টেকনাফে তোলপাড় চলছে। এর আগে জহিরুল ইসলাম বাবু নামের তার বড় ছেলে ইয়াবাসহ ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরে। এরপর ইয়াবা ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন বাবুর পিতা মৌলভী জহির। বুধবার ঢাকায় র্যাবের হাতে আটক হওয়ার সাথে সাথে টেকনাফের সিন্ডিকেট সদস্যদের মাঝে খবর ছড়িয়ে পড়লে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। এবার ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর আড়ালে বাহক কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা আসার খবর দিলো র্যাব। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই কখনও ডাবের ভেতরে, কখনও ফলের গাড়িতে, কখনও বাসে বিশেষভাবে তৈরি চেম্বারে ইয়াবা আসার খবর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে একটি সিন্ডিকেট নির্ধারিত কিছু লোকের মাধ্যমে অভিজাত এলাকায় নেয়া ভাড়া বাসায় ইয়াবা মজুদ করে। উক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আকাশপথে ঢাকা–কঙবাজার রুটে নিয়মিত যাতায়াত করছে। পরিবারের সকলে মিলেই ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে তারা। আর লেনদেন হয় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। রাজধানীর এ্যালিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে মৌলভী জহিরসহ (৬০) সিন্ডিকেটের ছয়জনকে আটক করে র্যাব–২। আটককৃত অন্যরা হল– মমিনুল আলম (৩০), ফয়সাল আহম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১), তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১) ও সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০)। এসময় তাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৭ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির ৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, এ্যালিফ্যান্ট রোডের বিলাসবহুল বাসার নিচ থেকে ফয়সাল, মিরাজ, সানি ও সঞ্জয়কে ৩৫ হাজার ইয়াবাসহ আটক করা হয়। এরপর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে জহির ও তার সহযোগী মমিনুলকে আটক করা হয়। এরপর অপর একটি বাসা থেকে বাকি ইয়াবা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, জহিরের পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জহির ও তার বড় ছেলে বাবু (২৮) গত ৫–৬ বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। গত এপ্রিলে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তিনি বলেন, এ সিন্ডিকেটে বার্মাইয়া আলম নামে একজনের তথ্য পেয়েছি। যে রাখাইনে বসবাস করছে। টেকনাফেও তার একটি বাড়ি রয়েছে। মূলত তার মাধ্যমেই নৌপথে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের বিভিন্ন স্টেশনে ইয়াবাগুলো আনা হয়। মুফতি মাহমুদ বলেন, টেকনাফ থেকে ফ্যান, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মতো বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিঙ সামগ্রীর ভেতরে ইয়াবা লুকিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়। কুরিয়ারে ঝুঁকি থাকলে নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তি এবং পরিবহনের ড্রাইভার ও সহকারীদের মাধ্যমেও ইয়াবার চালান পাঠানো হয়। নির্ধারিত বাস স্টেশন বা কুরিয়ার থেকে মমিন ও আমিন ইয়াবা সংগ্রহ করে জহিরের ভাড়া বাসায় পৌঁছে দিত। জহির ঢাকার ৫ ব্যবসায়ীকে নিয়মিত ইয়াবা সরবরাহ করতো বলেও জানা গেছে। ইয়াবা বিক্রির অর্থ ইলেক্ট্রনিঙ মানি ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং ও হুন্ডির মাধ্যমে টেকনাফে পাঠানো হতো। জহিরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, গত ১০–১৫ বছর আগে রোজিনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিএন্ডএফ ব্যবসা চালু করে জহির। তখন সাইফুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। টেকনাফ এলাকার ইয়াবা ব্যবসার সব যোগাযোগ রক্ষা করত জহিরের স্ত্রী। আমিন ও নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলেও জানান তিনি। ফয়সাল বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার হিসেবে কর্মরত, নিশান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র, সানি কলেজে ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং সঞ্জয় পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত। তারা সবাই ইয়াবাসেবী থেকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে যায়।