একাত্তরে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যার মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের চার রাজাকার সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত; একজনের হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করে।
পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে ফাঁসির আসামি কিশোরগঞ্জের আইনজীবী শামসুদ্দিন আহমেদই কেবল রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
শামসুদ্দিনের ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজউদ্দিন মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
এদের মধ্যে আজহারুলকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত; বাকিদের হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
একাত্তরে এই পাঁচ আসামি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।
সে সময় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেপুর বিল, কিরাটন বিলসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে তারা যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটান, তা এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে।
সরকার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের রায় কার্যকর করতে পারবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি পলাতকদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতেও বলা হয়।
রায় ঘোষণার পর আদালতে উপস্থিত একমাত্র আসামি শামসুদ্দিন বলেন, “ফলস উইটনেস, ফলস জাজমেন্ট…..। বানানো সাক্ষীর বিচার।”
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণা শেষ হলে তিনি একথা বলতে শুরু করেন। তবে তার গলার স্বর ছিল নিম্নমুখী। বিচার কক্ষের শেষপ্রান্তে অবস্থিত ওই কাঠগড়া থেকে তার কথা বিচারক পর্যন্ত পৌঁছানো নিয়ে সংশয় রয়েছে।
শামসুদ্দিন কথা বলতে শুরু করার পরই সক্রিয় হয়ে ওঠেন পাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা। তারা তাকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে আনতে উদ্যোগী হন। আসামির হাত ধরে নেমে আসতে পুলিশের তাগাদায় তিনি বলেন, “আসছি তো।”
এরপর তাকে নামিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারকরা আদালত কক্ষে আসার আগে শামসুদ্দিনকে হাজতখানা থেকে নিয়ে কাঠগড়ায় বসানো হয়। পৌনে ১১টার দিকে রায় পড়া শুরুর কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত তিনি বসেই ছিলেন। তবে ১১টার কাছাকাছি সময়ে তিনি চেয়ার থেকে উঠে কাঠগড়ার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। রায় শেষ হওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিরতি দিয়ে তিনি এভাবে দাঁড়ান। রায় শেষ হওয়ার সময়ও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আদালতে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকেও দেখা যায়।
কার কেমন সাজা
এ মামলায় প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর সবাই ছিলেন আসামি।
এছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে হত্যার ঘটনায় নাসির; ৫ নম্বর অভিযোগে হত্যার ঘটনায় শামসুদ্দিন; ৬ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা এবং ৭ নম্বর অভিযোগে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মান্নানকে আসামি করা হয়।
ঘটনা |
অভিযোগ |
আসামি |
রায় |
|
১ |
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর ও আয়লা গ্রামের ৮ জনকে হত্যা। |
অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা |
শামসুদ্দিন আহমেদ, নাসিরউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজউদ্দিন। |
# শামসুদ্দিন, নাসিরউদ্দিন ও মান্নানের মৃত্যুদণ্ড # আজহারুল ও হাফিজের আমৃত্যু কারাদণ্ড |
২ |
আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনকে হত্যা। |
হত্যা |
নাসিরউদ্দিন আহমেদ |
মৃত্যুদণ্ড |
৩ |
একই উপজেলার মো. আব্দুল গফুরকে অপহরণ, পরে খুদির জঙ্গল ব্রিজে নিয়ে হত্যা। |
অপহরণ, হত্যা |
পাঁচজনের সবাই আসামি |
# হাফিজের মৃত্যুদণ্ড # শামসুদ্দিন, নাসিরউদ্দিন ও আজহারুলের আমৃত্যু কারাদণ্ড # মান্নান খালাস |
৪ |
করিমগঞ্জ ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে আতকাপাড়া গ্রামে মো. ফজলুর রহমান মাস্টারকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা। |
অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা |
পাঁচজনের সবাই আসামি |
পাঁচ আসামির সবার আমৃত্যু কারাদণ্ড |
৫ |
রামনগর গ্রামের পরেশ চন্দ্র সরকারকে হত্যা। |
হত্যা |
শামসুদ্দিন আহমেদ |
মৃত্যুদণ্ড |
৬ |
পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক ও রূপালীকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা। |
অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা |
গাজী আব্দুল মান্নান |
আমৃত্যু কারাদণ্ড |
৭ |
আতকাপাড়া গ্রামে আক্রমণ করে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ। |
অগ্নিসংযোগ |
গাজী আব্দুল মান্নান |
৫ বছর কারাদণ্ড |
শামসুদ্দিন আহমেদ
শামসুদ্দিন আহমেদস্কুল রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী কিশোরগঞ্জ জেলা বারের সদস্য শামসুদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯৫৬ সালে। বাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলার করিমগঞ্জ মধ্যপাড়া (ডুলিপাড়া) গ্রামে।
একাত্তরে তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে করিমগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেশ কিছুদিন পলাতক থেকে আবারও সমাজের মূল ধারায় মিশে যান শামসুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিএ ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৯১ সালে এলএলবি করেন। তার চার বছর পর তিনি ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি পান।
এই লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯৮৫ সাল থেকেই নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন একাত্তরের এই যুদ্ধাপরাধী। তামোনি ভূইয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০০৪ সালে তিনি অবসরে যান।
শিক্ষকতা থেকে অবসরের পর শামসুদ্দিন ময়মনসিংহ জেলা বারে অ্যাডভোকেট হিসেবে এনরোলমেন্ট পান।
নাসিরউদ্দিন আহমেদশামসুদ্দিনের বড় ভাই নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক ক্যাপ্টেন। স্কুলের রেকর্ড অনুযায়ী, তার জন্ম ১৯৫৪ সালে।
প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গলবাড়ি হাই স্কুল থেকে নাসিরউদ্দিনের এসএসসি পাশের পরপরই দেশে শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। আর তিনি তখন যোগ দেন রাজাকারের দলে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শামসুদ্দিন ও নাসিরউদ্দিন দুই ভাই সে সময় ট্রেইনিং নেন রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে। নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়ে ছোট ভাইয়ের মতো স্বাধীনতার পর তিনিও আত্মগোপনে যান।
পরে একময় স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন একাত্তরের রাজাকার নাসিরউদ্দিন। এ কারণে এলাকার মানুষ তাকে ক্যাপ্টেন নাসির নামেও চেনে।
‘অনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগে ২০০২ সালে সেনাবাহিনী থেকে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
গাজী আব্দুল মান্নানজাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, গাজী আব্দুল মান্নানের জন্ম ১৯২৭ সালে করিমগঞ্জের চরপাড়া গ্রামে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা এই মান্নানই একাত্তরে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার বনে যান এবং রীতিমতো সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
সহযোগীদের নিয়ে তিনি নিজের এলাকায় নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে আদালতের নথিতে উঠে এসেছে।
হাফিজউদ্দিনকিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার খুদির জঙ্গল গ্রামের হাফিজউদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালে। লেখাপড়া করেছেন মাদ্রাসায়।
একাত্তরে তিনিও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় নানা যুদ্ধাপরাধ ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
আজহারুল ইসলাম
আজহারুল ইসলামজাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৫৬ সালে, করিমগঞ্জের হাইধনখালি গ্রামে।
হাফিজউদ্দিনের মতো তিনিও মাদ্রাসায় পড়েছেন এবং একাত্তরে রাজাকারের দলে যোগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধে যুক্ত হয়েছেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য।
মামলা বৃত্তান্ত
# প্রসিকিউশনের তদন্ত দল ২০১৩ সালের ৬ জুন এই পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এক বছর পাঁচ মাস ১৮দিন পর গতবছর ২৪ নভেম্বর তদন্ত কাজ শেষ হয়।
# তদন্ত চলার মধ্যেই ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার তারেরঘাট সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল শামসুদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে।
# ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন গতবছর ১০ মে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তিন দিন পর আদালত তা আমলে নেয়।
# অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গতবছর ১২ অক্টোবর পাঁচ আসামির যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে আদালত।
# রাষ্ট্রপক্ষে ২৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে কোনো সাক্ষী ছিল না।
# শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
# আসামি শামসুদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম মাসুদ রানা। পলাতক অপর চারজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান শুনানিতে অংশ নেন।
# প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১১ এপ্রিল আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে।
২৩তম রায়বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি আপিলের সুযোগ পাননি।
৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় হাজার হাজার মানুষ।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে জনতার দাবির মুখে সরকার ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনে। এর মধ্যে দিয়ে রায়ের বিরুদ্ধে দুই পক্ষেরই আপিলের সমান সুযোগ তৈরি হয়। ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেয়, যা কার্যকর করা হয় ১২ ডিসেম্বর।
ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ‘দেইল্যা রাজাকার’ নামে খ্যাত এই জামায়াত নেতার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৩ সালের ৯ মে ট্রাইব্যুনালের চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকেও মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। গতবছর ৩ নভেম্বর আপিলের রায়েও তার সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে। তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ১১ এপ্রিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উসকানির দায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুন ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিল ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম রায়। তার আপিলের শুনানি চলার মধ্যেই গতবছর ২৩ অক্টোবর রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৯২ বছর বয়সী জামায়াতগুরু।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর ১৬ জুন আপিলের রায়েও সেই সাজা বহাল থাকে।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আসে। তার সাজাও ২৯ জুলাই দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ে বহাল রাখা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় হয় ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর। যুদ্ধাপরাধের দণ্ড ভোগের মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে গতবছর ৩০ অগাস্ট মারা যান আলীম। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ১১ মাস কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালের প্রিজন সেলে ছিলেন তিনি।
বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে একাত্তরের দুই বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনেই পলাতক।
দশম রায় আসে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর। জামায়াত আমির একাত্তরের বদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকেও দেওয়া হয় সর্বোচ্চ সাজা, যিনি বাঙালি জাতিকে সমূলে ধ্বংস করতে ‘স্বেচ্ছায় ও সচেতনভাবে’ ইসলামের অপব্যবহার করেন বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়। তিনিও এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
একাদশ রায়ে গতবছর ২ নভেম্বর চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়। জামায়াতে ইসলামীর এই শুরা সদস্যকে দলটির প্রধান অর্থ যোগানদাতা বলা হয়ে থাকে।
এরপর ১৩ নভেম্বর ফরিদপুরের রাজাকার কমান্ডার পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। ২৪ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাকার কমান্ডার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেনকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়।
এরশাদ আমলের প্রতিমন্ত্রী ও একাত্তরে হবিগঞ্জের মুসলিম লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হয় গতবছর ২৩ ডিসেম্বর। এরপর ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায় আসে।
চলতি বছরের প্রথম রায়ে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানকেও একই সাজা দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের সপ্তদশ রায়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান পলাতক আবদুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আদালত।
গত ২০ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকেও আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৯ জুন কিশোরগঞ্জের রাজাকার পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলীকে ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
গতবছর ১৬ জুলাই পটুয়াখালীর রাজাকার সহযোগী ফোরকান মল্লিককে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। ১১ অগাস্ট বাগেরহাটের রাজাকার নেতা শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড এবং খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আদালত।
সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণার রাজাকার মো. ওবায়দুল হক ওরফে আবু তাহের ও আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।