ছোট ছোট দলগুলোর দাবি শুনে আক্কেলগুড়ুম হওয়ার দশা বিএনপির সরকারবিরোধী ঐক্য, নির্বাচন, আন্দোলনের জন্য জাতীয় ঐক্য করতে গিয়ে ।
জনসমর্থনের বিষয়টি পরীক্ষিত না হলেও বিকল্প ধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের যুক্তফ্রন্টই তাদের কাছে চেয়ে বসেছে ৩০০ আসনের ১৫০টি।
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হলে আর ভোটে গেলে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
ঢাকাটাইমসকে এই রাজনীতিক বলেন, ‘যেহেতু বিএনপি নিজের থেকে এসে বলেছে কথাগুলো, যে তারা ঐক্য চায়, এমনকি তারা ক্ষমতায় গিয়েও ঐক্য চায়। আমার কাছে মনে হচ্ছে তাদের সাথে কথা বলে ন্যূনতম জায়গায়, যতদূর বিস্তৃত করে ঐক্যটা করা যায়। সে ঐক্য করা হয়তো যাবে।’
গত নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে গিয়ে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা নিয়ে গঠন হয় যুক্তফ্রন্ট। তখন জোটে দলের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল পাঁচটি। কিন্তু কামাল হোসেনের গণফোরাম জোটবদ্ধ হওয়ার কথা দিলেও শেষ অবধি পিছিয়ে যায় আর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ যুক্তফ্রন্ট থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার আলোচনায়।
এর মধ্যে তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা আগের বহুবার বহু দলের ঘোষণার মতোই মিইয়ে গেছে, যদিও নাগরিক ঐক্যের প্রধান সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না তার ফেসবুক পেজে এখনও সেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আবার তৃতীয় শক্তির ঘোষণা দিয়েও ঘনিষ্ঠতা বিএনপির সঙ্গেই বাড়াচ্ছেন মান্না। জোটের আরেক শরিক বিকল্প ধারার নেতারাও প্রায়ই বিএনপির সুরেই কথা বলছেন। বিএনপি থেকে বের হয়ে পিটুনি খাওয়ার স্মৃতিভুলে একজোট তারা হবে কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলছে না কোনো পক্ষ।
তবে বিএনপি ভীষণভাবে আগ্রহী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দাবি আদায়ে আন্দোলন অথবা ভোটে অংশ নেয়া, কোন পথে যাবে তারা-সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
বিএনপি ভোটে যাওয়া বা ভোট বর্জন, যাই করুক, ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি আরও নতুন দলকে নিয়ে প্রভাব বলয় আরও বড় করতে চায়।
গত ২৮ জুন ঢাকায় এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরির কাজ চলছে। আমরা এ বিষয়ে নিয়মিত বসছি, আলোচনা করছি। এই জাতীয় ঐক্যে যদি সফল হওয়া যায় তবে আওয়ামী লীগ তিন দিনের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’
এই আলোচনা কতটা আগালো-জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে ১৫০টি আসন দাবি করেছিলাম। কারণ, বিএনপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়া যাবে না, যাতে তারা আবার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। আমাদের সেই দাবিগুলো নিশ্চিত হলেই কেবল তাদের সাথে আমাদের ঐক্য হতে পারে।’
এখন বিএনপি যুক্তফ্রন্টের দাবি মেনে নেবে কি না, সে বিষয়ে কিছুই বলছে না। তবে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘আমরা কিছুটা বেকায়দায় এটা ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে মান্নার জোটকে ১৫০ আসন ছেড়ে দেব, এটা কোনো কথা হলো?’
এত আসন কেন চাইছেন?-এমন প্রশ্নে মান্না বলেন, “ঐক্য করলাম, নতুন যে সরকার আসল, তারাও আগের সরকারের মতো ‘স্বৈরাচারী’ হলো, তাতো হলো না। তাই আমরা এখনই সেই গ্যারান্টি চাই। দেশে গণতান্ত্রিক সুশাসন নিশ্চিত করবার জন্য যে বাধা দূর করার জন্য যা করার দরকার তাই করব।’
বড় হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ছোট হয়েছে যুক্তফ্রন্ট
গঠনের পর আট মাসে যুক্তফ্রন্ট বড় হতে পারেনি এতটুকু। তবে ছোট হয়েছে, সেটা নিশ্চিত।
কারণ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক, শ্রমিক জনতা লীগ বের হয়ে যাওয়ার পর এখন বিকল্প ধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি আর নাগরিক ঐক্যই এখন শরিক।
এর মধ্যে নাগরিক ঐক্যকে রাজধানীকেন্দ্রীক মান্না সর্বস্ব সংগঠন বলা যায়। জাসদের একাংশ জেএসডির আ স ম আবদুর রবের এক কালে লক্ষ্মীপুরের একটি আসন থেকে জিতে আসার ক্ষমতা থাকলেও ১৯৯৬ সালের পর থেকে তিনি যতবার দাঁড়িয়েছেন, ততবার তৃতীয় হয়েছেন।
আর বিকল্পধারার মুন্সিগঞ্জে একটি আসন ছাড়া কোথাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনসমর্থন শক্তি আছে, সেটারও প্রমাণ নেই।
মান্না বলেন, ‘আমরা হয়তো শক্তিতে দুর্বল আছি বা শক্তি অতো আমাদের হয়নি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য সম্পর্কে খুব স্পষ্ট আছি।’
‘মূলত একটা কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র্রের জন্য আমাদের সংগ্রাম। একটা পরিপূর্ণ গণতন্ত্র, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র্ প্রতিষ্ঠার লাড়াই আমাদের সাধ্যমত করছি।’
তৃতীয় শক্তির কামাল হোসেন এবং কাদের সিদ্দিকী যুক্তফ্রন্ট থেকে কেন সরে গেলেন, এমন প্রম্নে মান্না বলেন, ‘এই জবাবটা ওনারাই ভালো দিতে পারবেন। আমরা এক সাথেই ছিলাম। এমনকি এক সাথে আমরা পাঁচ দল মিলে যে যুক্তফন্ট তার ঘোষণাও তৈরি করেছিলাম।’
“তখন ড. কামাল বিদেশে ছিলেন। ওনি যখন ফিরলেন, তার সমর্থন চাইলাম। তখন তিনি বললেন, ‘না, আমি ঐক্যের মধ্যে নেই। রাজনৈতিক নেতাদের ঐক্যে আমি বিশ্বাস করি না। জনগণের ঐক্যে বিশ্বাস করি’।”
‘আর কাদের সিদ্দিকী মনে করেন, ড. কামাল হোসেন থাকলে তখন আসবেন।’
‘তবে আমরা আমাদের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলবার চেষ্টা করছি। যেমন: গতকালকেও কিশোরগঞ্জে যুক্তফ্রন্টের মিটিং ছিল। মঙ্গলবার রংপুরে মিটিং, এ সপ্তাহে অন্তত পাঁচটা জায়গায় জনসভা করা হবে।’
তৃতীয় শক্তি হওয়ার বাসনা এখনও আছে
তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের সুরেই কথা বলার বিষয়টি নিয়ে মান্না বলেন, ‘আমরা তৃতীয় শক্তির জায়গা থেকে সরে আসিনি।…আমরা চাইছি একটা কল্যাণমূখী রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্র দরিদ্র জনগোষ্ঠী বা বেশিরভাগ মানুষের কল্যাণের দিকে তার দৃষ্টি দেবে। সেই রাষ্ট্র বেশি করে বড়লোকের চিন্তা করবে না, যেটা এখনকার সরকার করছে এবং সেই জায়গায় কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোন তফাৎ নাই।’
‘জোট আমাদেরই আছে, আমরা তাদের সাথে এই সমঝোতা করতে রাজি আছি যে, গণতন্ত্র্রের জন্য লড়াই করব। তবে বৃহত্তর যে আদর্শের লড়াই, লক্ষ্য যেটা, সেটার লড়াই আমরা আমাদের মতো করব।’