ইমিগ্রেশন পুলিশ মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান ‘মেগা-থ্রি’ অভিযানে সে দেশে শত শত অভিবাসীকে আটক করেছে সে দেশের । যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশী নাগরিক।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতিনিধিরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বহুদিন মালয়েশিয়াতে থাকার পরও যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, এই ধরপাকড় অভিযান নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে। কোথাও তারা হানা দিয়েছে, এ খবর জানামাত্র কমিউনিটির লোকজন ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে সবাইকে সতর্ক করে নিমেষে বার্তা পাঠাচ্ছেন।
কিন্তু তাতেও ধরপাকড় এড়ানো যাচ্ছে না। যেমন মঙ্গলবারই রাজধানী কুয়ালালামপুরের মারা ডিজিটাল মল ও তার আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৪ জন বাংলাদেশী সহ মোট ১৩৯ জনকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকরাও ছিলেন।
ওই অভিযানের শেষে ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুকশ্রি মোস্তাফার আলি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী ৩১ আগষ্টের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ শ্রমিককে থ্রি-প্লাস ওয়ান পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফিরত যেতে হবে।”
যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার সাংবাদিক শেখ কবির আহমেদ বিবিসিকে জানাচ্ছেন, ভয়ে ভয়ে দিন-কাটানো এই অবৈধ বাংলাদেশীরা অনেকেই অভিযোগ করছেন কথিত এজেন্টদের হাতে প্রতারিত হওয়াতেই তারা আজ অবধি সে দেশে বৈধ শ্রমিকের স্বীকৃতি পাননি।
“২০১৬র ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সরকার রিহায়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু যে তিনটে ভেন্ডর কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদের নাম ভাঙিয়ে বেশ কিছু নকল এজেন্ট বা দালাল বাংলাদেশীদের সঙ্গে বিরাট প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।”
“আমরা প্রচুর এমন ঘটনা পেয়েছি, যেখানে বাংলাদেশী শ্রমিকরা না-বুঝে ওই ভুয়ো এজেন্টদের হাতে চার থেকে পাঁচ হাজার রিঙ্গিত (প্রায় হাজার থেকে বারোশো মার্কিন ডলার) তুলে দিয়েছেন, তাদের আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছে – কিন্তু এজেন্টরা ওই টাকাটা মেরে দেওয়ায় তাদের আর কখনওই বৈধ হয়ে ওঠা হয়নি” , বলছিলেন মি আহমেদ।
শেখ কবির আহমেদ আরও বলছিলেন, যেসব ভুয়ো কোম্পানি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগেরই মালিকানাও ছিল বাংলাদেশীদের।
“মালয়েশিয়ান স্ত্রী থাকার সুবাদে তারা তাদের নামে ওই কোম্পানিগুলো খুলেছিলেন। কিন্তু তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার কোনও অধিকারই ছিল না, শুধু অর্থের লোভে তারা ওই অবৈধ শ্রমিকদের ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন”, জানাচ্ছেন তিনি।
মালয়েশিয়াতে শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা পেনাংয়ে কর্মরত সুলেমান নামে এক বাংলাদেশী যেমন জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের এজেন্ট তার কাছ থেকে চার হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশী ৮০ হাজার টাকা) নিয়ে বিনিময়ে শুধু একটি মাই ইজির কাগজ (ভেন্ডর সংস্থা) ধরিয়ে দেয় ।
“তারপর দীর্ঘদিন ঘুরেও আমার ভিসা না হওয়ার কারণে আমাকে এখন দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে।