চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার ইয়ার্ডে পড়ে আছে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে আনা ছয় হাজার টিইইউএস কন্টেনার দীর্ঘদিন ধরে । এসব কন্টেনার বন্দরের অতি গুরুত্বপর্ণ জায়গা দখল করে রাখার পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও আটকা রয়েছে প্রায় পনের হাজার কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কন্টেনারগুলো আটকে থাকলেও কেউ এগুলো খালাস করতে আসছে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষও আইনী জটিলতায় এগুলো নিলাম ছাড়া বিক্রি করতে পারছে না। আবার বিভিন্ন ধরনের বাজে পণ্যে ভরা কন্টেনারগুলো বিক্রি করতে নিলাম ডাকলেও প্রত্যাশিত দর উঠছে না। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পক্ষ থেকে কন্টেনারগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে কিনে নিতে বাধ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেসব ব্যাংক এসব কন্টেনার আনার জন্য ঋণপত্র খুলেছে তারা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক থেকে শুরু করে সকলকে চিনলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে উদাসিনতা দেখাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে বর্তমানে আটাশ লাখ টিইইউএস–এর চেয়ে বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এর প্রায় অর্ধেকই আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার। দেশের বিভিন্ন আমদানিকারক সরকারি বেসরকারি তফশিলী ব্যাংকে গিয়ে এলসি খোলার মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে পারেন। একজন মানুষ ইচ্ছে করলেই এলসি খুলতে পারেন না। ওই ব্যক্তির সাথে ব্যাংকের যোগাযোগ এবং পরিচয় থাকতে হয়। আবার প্রতিটি এলসির ক্ষেত্রে একজন গ্যারান্টার থাকেন। যিনি ব্যাংকের পরিচিত ও বিশ্বস্ত। পণ্য আমদানির নানা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করে আমদানি করা হয়। এলসির মাধ্যমে টাকাও বিদেশে পাঠানো হয়। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্যের চালানটি খালাস করা হচ্ছে না। আবার অনেক সময় ইট এবং বালি ভর্তি কন্টেনারও আটক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোটি কোটি টাকার পণ্য এনে তা সময় মতো খালাস না করা বহু ব্যবসায়ীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এই ধরনের অন্তত ৫ হাজার ৯৮০ টিইইউএস কন্টেনার আমদানি হয়েছে। যা বন্দর থেকে খালাস করা হয়নি। বন্দরের ইয়ার্ড দখল করে কন্টেনারগুলো পড়ে রয়েছে। এসব কন্টেনারের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে পারে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষও আইনি নানা জটিলতায় কন্টেনারগুলো পাহারা দিচ্ছে। সূত্র বলেছে, বিদেশ থেকে ফলজাতীয় বিভিন্ন জিনিস এনে তা খালাস না করার একটি ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল গত বছর। প্রায় পাঁচ লাখ টন ফল আমদানিকারক ৯ ব্যবসায়ী একটি কন্টেনারও খালাস করেননি। পচনশীল পণ্যগুলো বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যৌথ সিদ্ধান্তে সরিয়ে নিলেও নিলামযোগ্য কন্টেনারগুলো বন্দরের জায়গা দখল করে আটকে আছে। কন্টেনারগুলো খালাস না করায় বন্দরের ভিতরে জায়গার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। কন্টেনার জট নিয়ে বিভিন্ন সময় সংকটে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব কন্টেনার সরানোর চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। কন্টেনারগুলো বন্দরের জায়গা দখলের পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকার শুল্ক আটকে রয়েছে। এসব কন্টেনারের পেছনে দেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে বলেও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি মাহবুব চৌধুরী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দিয়েছি। যাতে এই কন্টেনারগুলোর এলসি যেসব ব্যাংকে খোলা হয়েছে সেসব ব্যাংককে এগুলো কিনতে বাধ্য করা হয়। ব্যাংক কোন পার্টির এলসি খুলেছিল তা তারা জানে। এখন এসব কন্টেনার ওই পার্টিকে দেয়ার ব্যবস্থা ব্যাংকগুলো করতে পারে। ভুয়া আমদানিকারক বলে কিছু নেই মন্তব্য করে মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমদানিকারকের নাম ঠিকানা ব্যাংকে রয়েছে। ভুয়া নাম ব্যবহার করলেও ব্যাংক অবশ্যই ওই ব্যক্তিকে চিনে। একেবারে হাওয়ার উপর কোন এলসি করার সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আবার কাস্টমসের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েও কোন কোন আমদানিকারক কন্টেনার আটকে রেখেছেন। এধরনের এক হাজারের মতো কন্টেনার বন্দরে আটকে আছে। আইনী জটিলতায় এসব কন্টেনারের বিষয়ে কাস্টমস কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে গতকাল কাস্টমসের পদস্থ একজন কর্মকর্তা। এবিষয়ে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্দরে আটকে থাকা এসব কন্টেনার আমাদের বড় মাথা ব্যাথার কারণ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে আমরা দফায় দফায় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে একটি ক্রাশপ্রোগ্রাম হাতে নেয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |