ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে । প্রথম দিকে এ আন্দোলনে অঘোষিত সমর্থন থাকলেও এখন ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির এ আন্দোলনে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি ধমকি দিলেও চলতি মাসের শুরু থেকেই বেপরোয়া ছাত্রলীগ। বেশ কয়েক দফায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে তারা। বাধ যায়নি ছাত্রীরাও। কুটুক্তির পাশাপাশি যৌন হয়রানিও করেছে তারা।
সর্বশেষ শাসক দলের এ ছাত্র সংগঠনটির হাতে নাজেহাল হলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও। আর ছাত্রলীগের এমন বেপরোয়া আচরণে বিরক্ত হয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেছেন- ‘আবার তোরা মানুষ হ।’ গতকাল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান। গত রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খানসহ কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদ ও লাঞ্ছনাকারীদের বিচারের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়েমা আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক শেখ সামস মোরসালিন, প্রভাষক মোহাম্মাদ আলী সিদ্দিকী প্রমূখ। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল মধুর ক্যান্টিন হয়ে ডাকসু, কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলা প্রদক্ষিণ করে আবার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করে। যেখানে লেখা ছিল-‘শিক্ষকের মর্যাদা আজ কোথায়’, ‘এবার তোরা ছাত্র হ’, ‘শিক্ষক আজ লাঞ্চিত কেন?’ ‘আমার ক্যাম্পাস কার দখলে’, ‘মূল্যবোধ আজ কোথায়’ ইত্যাদি। আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গতকাল শহীদ মিনারে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজক। যারা শিক্ষকদের উপর আাঙ্গুল তুলে শাসায় তারা মানুষ নয়। এ জন্য তাদের, আবার নতুন করে মানুষ হওয়া দরকার।’ মোহাম্মাদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষকদের উপর আঙ্গুল তুলেছে সরকার দলীয় একটি বিশেষ সংগঠন (ছাত্রলীগ)। তারা ছাত্র কিনা বা তারা তাদের সংগঠনের নীতি-আদর্শ মানে কিনা তা আমার জানা নেই। আর যারা শিক্ষকদের উপর আঙ্গুল তুলেছে তারা যে গর্হিত কাজ করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারা ছাত্র নামের কলঙ্ক। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’ বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমি বলেন, ‘তানজীম স্যার আমাদের কাছে বাবার মতো। একটি ন্যায্য দাবিতে দাঁড়ানোর কারণে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। শুধু তার উপরে নয়; অন্যান্য যে সকল শিক্ষকরা ছিলেন তারাও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। তাদের উপর আঙ্গুল তোলার সাহস ছাত্রলীগ কোথা থেকে পায়? এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাই।’ এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ প্রতিবাদ মিছিলও ভ-ুল করতে চেয়েছে ছাত্রলীগ। মিছিলটির পিছনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবুর নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২জন নেতাকর্মীকে মিছিলের পিছনে পিছনে যেতে দেখা গেছে। এসময় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয় ভীতি দেখায়। মিছিলের পিছনে পিছনে অবস্থান নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এখানে এসেছি।’