মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দোসরদের সন্তান ও স্বজনরা যেন সরকারি চাকরি না পায়, যেন তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকে, সে জন্য চেষ্টা করে যাবেন । এই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে অস্ত্র ধরা রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের তালিকা অচিরেই প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘রাজাকারের পরিবারের সদস্যরা যাতে সরকারি চাকরি না পায়, তারা যেন এদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে থাকে, সেজন্য যা যা করণীয় এ সরকার সবকিছু করতে বদ্ধপরিকর।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান নাট্যমঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন নিজ দেশের মানুষ আক্রান্ত তখন ইসলামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। তারা অস্ত্র হাতে তুলে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি চিনিয়ে দেয়।
যুদ্ধের পর পর এসব দল নিষিদ্ধের পাশাপাশি দালাল আইনে বিচার চলতে থাকে। তবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দালাল আইন বাতিল করে সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারের অপেক্ষায় থাকা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ দলগুলোকে আবার রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রিসভাতেও জায়গা করে দেন।
পাকিস্তানপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা অপপ্রচারের পাশাপাশি গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা নিয়েও নানা কটূক্তি করতে থাকে।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সফলতাকে অস্বীকার করেন হলোকাস্ট অ্যাক্ট বা জেনোসাইড ‘ল’ প্রবর্তন করে তাদের মুখ চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার কোনো নাগরিককে থাকতে পারে না।’
বর্তমান সরকার আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে। এরই মধ্যে শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অধিকাংশের সাজা কার্যকর হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের শুধু শাস্তি পেলে হবে না। তাদের সম্পত্তি বায়েজাপ্ত করতে হবে। তাদের সন্তানেরা যাতে সরকারি চাকরি না পায় আমাদের সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘সরকারের প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে জামায়াতসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের যে সন্তানরা ঘাপটি মেরে বসে আছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, তাদের কাছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিরাপদ নয়।’
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপটেন তাজুল ইসলাম তাজ প্রমুখ এ সময় বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সারাদেশ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাবেক কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন।
সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের ঘোষিত ছয়দফা কর্মসূচির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
এ ছয়দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিষিদ্ধ করা, যারা চাকরিতে রয়েছে তাদের বের করে দেওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষকারীদের বিচারের আওতায় আনা, বিএনপি-জামায়াতের চালানো নাশকতার বিচার ও কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চালানো নাশকতার বিচার।
এ দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য আগামী ১৯ জুলাই থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সভা সমাবেশ, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, প্রতিনিধি সভা ও স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।