যতক্ষণ পর্যন্ত প্রস্তাবিত আইন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পর্যালোচনা চলবে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমবান্ধব হবে-সেটাই কামনা আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের। বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রস্তাবিত আইন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পর্যালোচনা চলবে।
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘যাতে পুরনো আইনের অভিজ্ঞতা হয়েছে সেগুলো দূর করে আমরা যেন সারা বিশ্বের কাছে একটা রোল মডেলের মতো আইন করতে পারি।’
বৈঠকে দ্যা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, একুশে টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু উপস্থিত ছিলেন।
২০১৭ সালে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত আইনটি বাক স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতির বিরোধী কি না, এ নিয়ে বিতর্ক উঠে। আর এর পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। আর আইনমন্ত্রীও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে কিছু সংখ্যক রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। পরে এডিটর্স কাউন্সিল, বিএফইউজে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজন আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এই আইনটি আছে।’
‘সেখানে তারা তাদের মতামত দেবেন। সেখানে তারা দুই গেছেন। গত মিটিংয়ে তারা অনুরোধ করেছিলেন আমার সঙ্গে আরেকবার বসবেন সেই বসাই আজকে।’
‘যে সংশোধনগুলো আনা হয়েছিল সেগুলো নিয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারপরও কিছু কিছু ব্যাখ্যা তারা আমার কাছে চেয়েছেন। আর নতুন কিছু সাজেশন দিয়েছেন। আইনটার বিষয়ে এমন যেন একটা পারসেপশন না হয় যে এটা সংবিধানে বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকতায় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল, সেটা যেন বন্ধ না করে।’
‘সেখানে আমি আগেও বলেছি, এখনও পরিস্কারভাবে বলতে চাচ্ছি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর দেয়া সংবিধানের বাক স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব করে কোন আইন করবে না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইনটার মধ্যে কিছু কিছু প্রটেকশনের কথা বলা হয়েছে যে, সেখানে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে সেগুলো যাতে আমরা আরেকটু ভালভাবে দেখি। সেই সুপারিশগুলো আমরা নিয়েছি।’
‘আমাদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে, সেই সুপারিশগুলো আমি পৌঁছে দেব। আমি এগ্রি করেছি, আমরা আরেকবার বসব। তারপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সিদ্ধান্ত হবে সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিলটা পাস হবে।’
আইনটা কবে নাগাদ পাস হতে পারে-এমন প্রশ্নে আনিসুল বলেন, ‘এটা আইন মন্ত্রণালয়ের আইন নয়, এটা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আইন। তারা যখন পাস করার জন্য উপস্থাপন করবেন।’
‘তবে, ১২ জুলাই হয়তো পার্লামেন্ট শেষ হয়ে যাবে। দুই মাসের মধ্যে আবার পার্লামেন্টকে আবার বসতে হবে। আমার মনে হয় ওই সেশনে এই আইনটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘খসড়া আইনটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমরা আইনমন্ত্রীকে অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন, কীভাবে এগুলো গ্রহণ করা যায় তা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। সিদ্ধান্ত পার্লামেন্ট নেবে, আমরা পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করছি।’
‘আমরাবলেছি, সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেন কোনভাবেই খর্ব না হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা যাতে রক্ষা করা যায়। এটা মন্ত্রীও বলেছেন, সরকারের উদ্দেশ্যও এটা। ওনারাও চান না সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব হোক।’
‘তবে আইনের ধারার মধ্যে মিস ইন্টারপ্রিটেশন থাকতে পারে, যেগুলোর উপরে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। কনসার্ন এক্সপ্রেস করেছি’-বলেন মাহফুজ আনাম।
একুশে টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারার ব্যাখ্যায় অস্পষ্টতা ছিল, আইনমন্ত্রী সেগুলো স্পষ্ট করেছেন। সাংবিধান বা অন্য আইনের সঙ্গে কোন কিছু সাংঘর্ষিক কি না, সেগুলো বলেছেন। আমরা বলেছি, দেশের স্বার্থে, নিরাপত্তার স্বার্থে একটা নিরাপত্তা আইন চাই। আইনের ব্যাখ্যামূলক ও স্পিরিট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘আমরা মনে করি এই আইনের মাধ্যমে আমাদের সাংবাদিকতা কোনভাবেই ক্ষুণ্ন হবে না। তবে অপসাংবাদিকতা, ডিজিটাল মিডিয়ায় যে নৈরাজ্য চলছে, গুজবের ফেইক নিউজের সংস্কৃতি চলছে সেটার মোকাবেলা করা প্রয়োজন। উনি (আইন মন্ত্রী) যেমন মনে করেন, আমরাও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় যারা কাজ করি, তারা আরও বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি।’