kunএকই কায়দায় চাপাতির কোপে খুন হলেন ঢাকার কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে একই কায়দায় চাপাতির কোপে খুন হলেন নিখিল জোয়ারদার (৫০) নামের এক দরজি। পৌর শহরের ডুবাইল মহল্লায় নিজের দোকান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে এলাকাবাসীর ধাওয়ায় বোমাসহ একটি ব্যাগ ফেলে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায় ঘাতক তিন যুবক।

রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায়ও একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পর পর দুটি হত্যাকাণ্ডে দুর্বৃত্তরা অভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে এবং খুনের পর তারা ব্যাগ ফেলে গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় বড় খুনের ঘটনায় এমনটা দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে এটি নতুন।

সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালে দরজি নিখিল দোকান খোলেন। ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন তরুণ ওই দোকানে আসে। তারা ‘কথা আছে’ বলে নিখিলকে দোকান থেকে ডেকে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। কথা শুরুর একপর্যায়ে তারা চাপাতি দিয়ে নিখিলের মাথা ও গলায় আঘাত করতে থাকে। নিখিলের চিৎকার শুনে তাঁর স্ত্রী আরতি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।বের হয়েই তিনি দেখেন দুই তরুণ নিখিলকে কোপাচ্ছে এবং একজন মোটরসাইকেলে বসে আছে। আরতি এ সময় এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে রক্তমাখা চাপাতি দিয়ে ভয় দেখানো হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলের কাছে থাকা এক ব্যক্তি ইট হাতে তাদের দিকে এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা ককটেল মারার ভয় দেখায়।

চলে যাওয়ার সময় হামলাকারীরা একটি ব্যাগ ফেলে যায়। পরে পুলিশ ওই ব্যাগ থেকে চারটি ককটেল-জাতীয় বস্তু ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করে।

এর আগে কলাবাগানে গত সোমবার জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া একটি ব্যাগে নয় ধরনের আলামত পায় পুলিশ। কলাবাগানে জোড়াখুনের মিশনে অংশ নেয় পাঁচ-ছয়জন যুবক। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের প্রত্যেকের কাঁধে ব্যাগ ছিল। গায়ে ছিল একই রঙের টি-শার্ট। একপর্যায়ে এএসআই মমতাজ দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। তবে তিনি একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। পরে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।

টাঙ্গাইলে দরজিকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় যে কাপড়ের ব্যাগটি পাওয়া যায় তার মধ্যে চারটি ককটেল-জাতীয় বস্তু ও দুটি চাপাতি পাওয়া যায়। আর রাজধানীর কলাবাগানে পাওয়া ব্যাগেরমধ্যে পিস্তল, ম্যাগাজিন, গোলাকৃতির আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, লাল চেক গামছা, পুরোনো লুঙ্গি, কাপড়ের টুপি, বাংলা ও আরবি লেখা সাদা কাগজের টুকরো ও অফিসিয়াল ব্যাগ পাওয়া গেছে।

খুনিদের এই নতুন স্টাইল বা ট্রেন্ড  সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকার ডিসি মিডিয়া মারুফ হোসেন সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, কলাবাগানে ডাবল মার্ডারে সময় খুনিরা ব্যাগ ফেলে যায়নি। খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের একজন এসআই ওদের একজনকে জাপটে ধরে।পরে এসআইকে আঘাত করে পালানোর সময় ব্যাগটি ওরা ফেলে যায়। তিনি বলেন, আর টাঙ্গাইলের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ব্যাগ ফেলে যাওয়ার দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো-হত্যার পরে দ্রুত পালানোর জন্য তাড়াহুড়ার কারণে ব্যাগ ফেলে যেতে পারে। আর একটি কারণ হলো-মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টির জন্য বোমা বা বোমা সদৃশ্য বস্তু ফেলে রেখে যেতে পারে যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলার সময়ও দেখা যায়। তবে কলাবাগানে যে জোড়া খুনের পর জনতার ধাওয়ার কারণে খুনিরা ব্যাগ ফেলে গেছে বলে আমার মনে হয়।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031