থাকা ফলের তালিকায় স্থান পেয়েছে মানুষের খাওয়ার উপযোগী কলার প্রজাতি সংরক্ষণের চাবিকাঠি যার মধ্যে নিহিত আছে বলে মনে করা হয় – এমন এক ধরনের বন্য কলা বিলুপ্তির পথে ।
আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারেই কেবলমাত্র এই কলার গাছ দেখা যায়। সেখানে বনের মধ্যে এ ধরনের পূর্ণবয়স্ক কলা গাছ রয়েছে মাত্র পাঁচটি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কলাগাছগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ কলাকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ রাখার গোপন চাবিকাঠি এর মধ্যেই নিহিত আছে।
সারা পৃথিবীতে যে ধরনের কলা মানুষ বেশি খেয়ে থাকে – সেগুলো ক্যাভেন্ডিশ নামে পরিচিত। কিন্তু এগুলো উদ্ভিজ্জ কীটপতঙ্গের আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে আছে ।
বনের মধ্যে এই প্রজাতির হাতে গোনা কয়েকটি কলা গাছ আছে মাত্র।
সে জন্যই এখন নতুন এক ধরনের কলা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে – যা একইসঙ্গে খেতে সুস্বাদু হবে এবং পানামা ডিজিজ (কলায় এক ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণ) থেকে বেঁচে থাকার মতো যথেষ্ট রোগপ্রতিরোধী হবে।
‘মাদাগাস্কান কলা’ আফ্রিকার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে উৎপন্ন হয় এবং এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ব্রিটেনের কিউ রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস-এর সিনিয়র বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা রিচার্ড অ্যালেন বলেন, “এই প্রজাতিটির মধ্যে প্রকৃতিগত-ভাবেই খরা কিংবা রোগ মোকাবেলা করার সহ্যশক্তি রয়েছে। পানামা ডিজিজ নেই, সুতরাং সম্ভবত এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জিনগত সুবিধা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই কলার ওপর বিশদ গবেষণা করার আগ পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এটি সংরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা গবেষণাও করতে পারছিনা।”
বিজ্ঞানীরা মাদাগাস্কারে এই গাছের অনুসন্ধান করেন এবং দেখতে পান এগুলো ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তবে আইউসিএন-অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার তাদের সর্বশেষ লাল তালিকাতে এই ফলটিকে অন্তর্ভুক্ত করায় – কলার ফলনের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
কিউ মাদাগাস্কার কনজারভেশন সেন্টারের ডক্টর হেলেন রালিমানানা বলেন, “বন্য প্রজাতির কলা সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে বিশাল বীজ থাকে এবং যার মাধ্যমে কলা চাষের উন্নতির জন্য একটি জিন খুঁজে বের করার সম্ভব হবে পারে।”
এই কলা যদি সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে বীজ সংরক্ষণ করা যাবে এবং গাছের জিনগত বৈশিষ্ট্য বোঝা সম্ভব হবে।
মাদাগাস্কান কলার ভেতরেই বীজ তৈরি হয় তার মানে এটি খাওয়ার জন্য ঠিক সুবিধার নয়।
মিশ্র প্রজননের মাধ্যমে নতুন ধরনের কলা উৎপন্ন করা সম্ভব । যেটি হবে একইসঙ্গে খাবার-যোগ্য এবং টেকসই।
বনের প্রান্তে যে বেড়ে উঠছে এই কলা সেখানে আবহাওয়া সংক্রান্ত নানা সমস্যা, আগুন কিংবা বন কেটে ফেলা ইত্যাদি কারণেও সঙ্কটে পড়ে এর চাষাবাদ।
কলা সাধারণত একটি গাছে রোগ দেখা দিলে তা দ্রুত সবগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন করবেন, দোকানে তো কলা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এখনো-তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা হল, বর্তমানের চিত্র এটি হলেও কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো তা থাকবে না।
ক্যাভেন্ডিশ কলায় রোগ বালাইয়ের উপদ্রব এশিয়াতে বর্তমানে সীমাবদ্ধ তবে এটি যদি আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়ে তবে কলা উৎপাদনে নেতিবাচক ফলাফল দেখা যাবে।
এটা ঘটেছিল ১৯৫০ সালে যখন গ্রস মাইকেল নামে একধরনের কলার ক্ষেত্রে পানামা ডিজিজ বা ফাঙ্গাস এর কারণে কলার ফলন নষ্ট হয় এবং এর অভাব দেখা দেয়। তখন এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে “ইয়েস উই হ্যাভ নো বানানাস”‘ এই গানটি লেখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
এরপর গ্রস মাইকেল কলার স্থানে আসে ক্যাভেন্ডিশ কলা। ডেভনশায়ারের ষষ্ঠ ডিউক উইলিয়াম ক্যাভেন্ডিশ এই কলার নামকরণ করেন। তিনি ডার্বিশায়ারের চ্যাটসওয়ার্থ হাউজে বাস করতেন । চ্যাটসওয়ার্থে ১৮৩০ সাল থেকে কলা উৎপাদন করা হতো যখন প্রধান সে কলাবাগানের প্রধান জোসেফ প্যাক্সটন মরিশাস থেকে যে কলা আমদানি করে তার নমুনা ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে যেসব কলা আসছে সেগুলো এই একই প্রজাতি থেকে আসে।
মাদাগাস্কার কলা বলতে কী বোঝায়?
এর বৈজ্ঞানিক নাম এনসেট বেরিএরি এবং গুরুতর-ভাবে ঝুঁকিতে থাকা ফল হিসেবে তালিকাভুক্ত।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলে এটি পাওয়া যায় যেখানে বনভূমি উজাড় হওয়ার হুমকিতে আছে ।
বনের মধ্যে কেবলমাত্র পাঁচটি গাছ রয়েছে বলে জানা যায়।
সুত্র- বিবিসি