গত কয়েক দিনে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে।দ্রুত কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ফের আন্দোলনে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান দেখা গেছে।গ্রেপ্তার করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্রসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকে। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং গ্রেপ্তারের মধ্যেই সোমবার কোটা সংস্কার নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন্নাহার লুনা বিবিসিকে বলেন, তাদের বহু নেতাকর্মী হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন।
অনেকে গ্রেপ্তার ও হামলার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে তিনি জানান।”আমরা কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় আন্দোলন থামিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রায় তিন মাসেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আপনারা যদি মনে করেন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা, তার আগে তো আমাদের পরিচয় আছে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী।” শহীদ মিনারে হামলায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতাদের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোটা আন্দোলনের নামে বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক এবং গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। এরকম পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে জামাত শিবিরের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারাই আসবে ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করবে।” কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ধৈর্য নিয়ে একদিকে যেমন বিতর্ক হচ্ছে, তেমনি কোটা বাতিল ঘোষণার পর এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য ও কার্যক্রমে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে বলেও সমালোচনা হচ্ছে। সবমিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন, সরকারের অবস্থান এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, মামলা পুরো পরিস্থিতিকে জটিল করেছে বলেই অনেকে মনে করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বিবিসিকে বলেন, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তার মতে আন্দোলনের একটা ভিন্ন রূপ দাঁড়িয়ে গেছে নানা কারণেই, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা ঘোষণা দিয়েছেন সেটা সময় নিয়ে একটু দেখা যে কী হচ্ছে এটা একটা বিষয়। আবার এমন নয় যে চাপ দেয়া যাবে না, অবশ্যই আন্দোলনকারীরা চাপ দিতেই পারেন। যে কোনো দাবি দাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ওপরে চাপ প্রয়োগ করাটাই আন্দোলনের ধর্ম। কিন্তু সেই আন্দোলনে কোনোরকম আক্রমণ করা, অন্য ছাত্র সংগঠনের আক্রমণ করা সেটাও একটা গর্হিত কাজ।”কোটা সংস্কার বা এই নামে যেকোনো আন্দোলন প্রতিহত করতে সরকারের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাগরিক সমাজও আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন মনে করেন, ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব ছিল। তিনি বলেন, “যথেষ্ট কালক্ষেপণ হয়েছে। এটা নিয়ে কালক্ষেপণ করার কিছু ছিল না। এই কমিটি তৈরি আসলে অনেক আগেই করা যেত। এই ব্যবস্থাগুলি আরো আগে নেয়া যেত। এই যে অপ্রীতিকর শুধু নয় একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হলো, যে বিশ্বাস মানুষের মন থেকে নষ্ট হলো, যে চিত্রগুলি অভিভাবকদের সামনে উপস্থাপিত হলো, সেগুলি আসলে বন্ধ করা যেত। আমি মনে করি যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের অধিকতর দায়িত্ব ছিল।”এখন সরকার কোটা সংস্কারের বিষয়ে কমিটি করলেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, মামলা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চাপা ক্ষোভ এবং উত্তেজনা কাজ করছে।