পুলিশ মনে করছে ছিনতাইকারীদের হালনাগাদ তথ্য না থাকা ও ভুক্তভোগীদের মামলায় অনীহার কারণে চট্টগ্রামে ছিনতাই প্রতিরোধে সাফল্য আসছে না বলে ।
ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগ মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ হারানোর এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ‘পাত্তা দেয় না’ ।
তবে পুলিশের ভাষ্য, ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও মামলা করতে অনীহার কারণে তারা ছিনতাই প্রতিরোধে তেমন কিছু করতে পারেন না।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, মোবাইল ছিনতাইয়ের অনেক খবর তারা পেলেও বেশিভারগ ক্ষেত্রে মামলা হয় না।
বিভিন্ন থানায় মোবাইল হারানোর বিষয়ে জিডির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “ছিনতাইয়ের ঘটনায় ‘হারানোর’ জিডি না নিয়ে মামলা নিতে থানাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
“কিন্তু ভুক্তভোগীরা মামলা চালানোর জন্য আদালতে যাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে চান বলে মামলা করেন না।”
এক্ষেত্রে জিডির মাধ্যমে অনেক সময় মোবাইল উদ্ধার হলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় অপরাধীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না বলে দাবি পুলিশ কর্মকর্তা রউফের।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকায় সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র। এসব চক্রে পেশাদার ছিনতাইকারীদের পাশাপাশি উঠতি বয়সী কিছু তরুণও জড়িয়ে পড়ছে।
নগরীরতে ছিনতাইপ্রবণ হিসেবে পুলিশের খাতায় কোতোয়ালি থানার লাভ লেইন থেকে নেভাল অ্যাভেনিউ, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে সিআরবি কাঠের বাংলো, টাইগারপাস মোড় থেকে কদমতলী, ডিসি হিল থেকে রাইফেল ক্লাব, শহীদ মিনার এলাকা, সার্সন রোড, আসকার দিঘীর পাড় থেকে গণি বেকারি মোড়, রহমতগঞ্জ এলাকা চিহ্নিত।
এছাড়াও নিউমার্কেট, বিআরটিসি মোড় এলাকায় মোবাইল ছিনতাইকারীরা সক্রিয়। চকবাজার থানার কলেজ রোড, খুলশী থানার জাকির হোসেন রোড, আমবাগান এলাকা, পতেঙ্গা থানার কাঠগড়, হালিশহর থানার বড়পোল এলাকা, বায়েজিদ বোস্তামী থানার মুরাদপুর অক্সিজেন রোড, ষোলশহর-বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক এলাকায়ও অহরহ ছিনতাই হচ্ছে।
২০১৩ সালে আমবাগান এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছিলেন।
সবশেষ গত ২৪ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশের বাদুরতলা এলাকায় বাস থেকে নামিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে ১৯ এপ্রিল নগরীর জুবিলি রোডের মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কাজীর দেউড়ি যাওয়ার পথে নেভাল এভিনিউ মোড়ে দিনদুপুরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন দুই ভাই। ছিনতাইকারীরা তাদের কাছে থাকা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত ৮ এপ্রিল এক ব্যবসায়ী আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে টাকা তুলে চান্দগাঁও যাচ্ছিলেন। পথে সিটি করপোরেশন এলাকায় কয়েকজন তরুণ তাদের একজনের বোনকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তুলে ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করে তার টাকার ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
মামলায় অনীহা
ছিনতাইয়ের শিকার অধিকাংশ ভুক্তভোগীর দাবি, পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোকে তেমন পাত্তা দেয় না। তাছাড়া থানা-আদালত ছোটাছুটি করতে হবে- এমন আশঙ্কায় অধিকাংশই মামলার ঝামেলায় যেতে চান না।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, কিছুদিন আগে অফিস থেকে ফেরার পথে বিআরটিসি মোড়ে বাস থেকে নামার পর তার মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। বিষয়টি থানায় জানালে তারা মামলা করার পরামর্শ দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “মামলা করতে আদালতে যাওয়াসহ নানা ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে তাতে অনীহা প্রকাশ করি। জিডি করে চলে এলেও তাতে কোনো সুফল পাইনি।
“বলা যায়, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে তেমন পাত্তা দেয় না পুলিশ। আর আসামি শনাক্তসহ নানা ঝামেলার কারণে অনাগ্রহও তৈরি হয় সাধারণের মধ্যে।”
এ অভিযোগের জবাবেই ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।
দুই বছরের পুরনো তালিকা
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে দুই বছর আগের এক তালিকায় শতাধিক ছিনতাইকারীর নাম আছে। তবে বর্তমানে তাদের অবস্থা কী এবং নতুন করে কারা ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য নেই।
২০১৪ সালের ওই তালিকায় নগরীর ১৬ থানায় এলাকায় সক্রিয় পেশাদার ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি ও গামছাপার্টির ১০২ জনের নাম ছিল।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, “ছিনতাইয়ে যারা জড়িত হচ্ছে তাদের অনেকে ভাসমান। এক জায়গা থেকে ছিনতাই করে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেয়।”
তবে ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা আছে এবং ধরাও পড়ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ছিনতাই ঠেকাতে পুনরায় তালিকা করার কথা জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সহসাই আমরা একটি তালিকা করব। সে অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হবে।”