সিলমোহরযুক্ত কয়েকশ পরিত্যক্ত ব্যালট পেপারের সন্ধান মিলেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার একদিন পর ২নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে । এঘটনায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামীপন্থী কাউন্সিলররা দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উৎকোচের অভিযোগ এনেছেন। প্রতিবাদে এলাকায় শাখা সড়কে বিক্ষোভ করেছেন কাউন্সিলরদের সমর্থকরা।
বুধবার সকালে চক্রবর্তী এলাকার সিনকা প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সিলমোহরযুক্ত ব্যালট পেপারগুলো পড়ে থাকতে দেখেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি। পরে বিষয়টি তিনি প্রধান শিক্ষককে জানান।
প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, স্কুলের দপ্তরি সকালে অফিস কক্ষ খুলে ঝাড়ু দেওয়ার সময় ব্যালট পেপারগুলো পড়ে থাকতে দেখে তাকে খবর দেন। পরে তিনি স্কুলে গিয়ে কেন্দ্রের মধ্যে কিছু ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখেন। এমনকি কেন্দ্রের জানলা দিয়ে বাইরে ফেলা বেশ কিছু অর্ধেক অংশ পুড়িয়ে ফেলা ব্যালট পেপার ওই সময় খুঁজে পান তারা।
২নং ওয়ার্ডের সরকারি দল সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী এম. এ হালিম অভিযোগ করেন, কেন্দ্রটিতে দায়িত্বরত পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান ও আমিনুল ইসলাম তার কাছে অনৈতিকভাবে ভোটে জিততে হলে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। তবে তিনি তাদের কথা না শোনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার ‘মিষ্টি কুমড়া’ প্রতীকের সিলমোহর যুক্ত ব্যালট পেপারগুলো রাতের আঁধারে পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থী এভাবে নষ্ট করেছেন।
এম এ হালিম বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া এর আগেও তিনি ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এলাকার মানুষ তাকে ভালোবেসে ভোট দিলেও পুলিশ টাকার জন্য প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থীর হয়ে তার এত বড় ক্ষতি করেছে।
একই অভিযোগ করেন সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী পারভিন আক্তার।
এছাড়া নৌকা প্রতীকের হয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কেন্দ্রের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগের রাতে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তার কাছে উৎকোচ দাবি করেন। এতে তিনি অস্বীকৃতি জানালে কীভাবে নৌকা প্রতীক নির্বাচনে জয় লাভ করবে সেটাও তারা দেখে নেবে বলেও হুমকি দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে নির্বাচনের দিন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাকে প্রথমে ঘাড় ধরে বের করে দেন উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান ও আমিনুল ইসলাম। এসময় বাধা দিলে তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন তারা। পরে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান তিনি।
এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউই ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে এব্যাপারে অভিযুক্ত অপর পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, টাকা দাবি করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের পাঁচটি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার। এর মধ্যে সিনকা প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রটির অধীন ভোটার রয়েছে প্রায় ছয় হাজার।