আবার জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না । তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি পদ্ধতি চট করে বাতিল করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেছেন, কীভাবে এটা করা যায়, তা নির্ধারণে কাজ চলছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখার সময় অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো কোটার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এর আগে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও কোটার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ নিয়ে দ্রত সমাধান দেয়ার তাগাদা দেন তিনি।
গত এপ্রিলে কোটা সংস্কারের দাবিতে তুমুল আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেন, কোটা সংস্কার নয়, কোটা থাকবে না।
কোটা আন্দোলনকারীরা একে স্বাগত জানালেও দ্রুত প্রজ্ঞাপন না দেয়ায় রোজার আগে আবার আন্দোলন শুরু হয়। আর প্রজ্ঞাপনে বিলম্ব হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে আন্দোলনকারীরা সংশয় প্রকাশ করেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে যা বলেছেন, সেটি আন্দোলনকারীদের সংশয় দূর করতে ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে যুক্তিযুক্ত মনে করছেন না এটি তার বক্তব্যে স্পষ্ট। তারপরও যেহেতু যাদের জন্য কোটা তারাই যখন চাইছে না, তাই তিনি সেটা বাতিল করেছেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭২ সালে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা, তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা…অনেক এলাকা আমাদের আছে, যেসব এলাকা অনুন্নত, সেই কারণেই, মেয়েদের জন্য, প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটার ব্যবস্থা।’
‘আমাদের শিক্ষার্থীরা দেখলাম হঠাৎ ঝাপিয়ে পড়ল কোটাপদ্ধতি বাতিলের জন্য। আমি ভেবে দেখলাম, হলে যারা থাকে, তারাই তো এসব জেলা থেকে, গ্রাম থেকে আসে। তারাই তাহলে যাদের জন্য কোটা, তারাই যদি না চায় তাহলে এটা রাখার দরকার কী?’
‘ইতিমধ্যে আমরা কেবিনেট সেক্রেটারিকে দিয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। এত বছর যে তাকে তো আর রাতারাতি…।’
‘আমি বলে দিয়েছি থাকবে না, এই থাকবে না। এটা কীভাবে কার্যকর করা যায়, তার জন্য কেবিনেট সেক্রেটারিকে দিয়ে একটা কমিটি করে দেয়া হয়েছে যেন এটা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’
বিদেশে উচ্চ শিক্ষার বিপুল পরিমাণ খরচের কথা শিক্ষার্থীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বে সবচেয়ে কম খরচে পড়া যায়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থাভাবে অক্সফোর্ডে সুযোগ পেয়েও পড়তে পারেননি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, তার নিজের সন্তানরাও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ তিনি টাকা দিতে পারেননি।
‘আমাদের দেশে যারা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে থাকে, তাদের সিট ভাড়া কত, তাদের খাবারের টাকা কত, তাদের পড়াশোনার ফিস কত। বলতে গেলে একেবারে বিনা পয়সায় পড়াই।’
‘তারা যদি রাস্তায় নামে, ভিসির বাড়ি ভাঙচুর করে, লুটপাট করে, এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। সেই জন্য বলেছি, কোটা পদ্ধতি বাদ দিয়ে দিয়েছি।’
‘একটি কমিটি করে দিয়েছি, তারা করবে। এরপর মফস্বলের কেউ যদি চাকরি না পায়, তার জন্য অন্তত আমাদের দায়ী করতে পারবে না।’
‘এটা প্রসেসে আছে, চলছে। বিরোধীদলীয় নেতা যেহেতু বিষয়টা তুলেছেন, এই কথাটা জানালাম।’