dargaদারোগার বিচার চাইলেন  শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক গোলজার রহমান আদালত চত্বরে ডুকরে কাঁদছেন আর দু’হাত তুলে দারোগার বিচার চাইলেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। তাকে সান্তনা দিয়ে কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, রিকশা চালিয়ে জীবকা নির্বাহ করেন তিনি। অভাব অনটনের সংসারে ঘাটতি মেটাতে ছেলে মাসুদ রানা শিপলু ও মেয়ে শেফালী শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় একটি বাল্ব ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন।

সোমবার রাত ১২টার দিকে এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং চলাকালে ঘরে প্রচণ্ড গরম হওয়ায় ছেলে মাসুদ রানা শিপলু বাড়ির বাহিরে বের হয়। এমন সময় স্টেডিয়াম ফাঁড়ি পুলিশ তাকে আটক করে প্রথমে ফাঁড়িতে এবং পরে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে রিকশাচালক গোলজার ছেলেকে থানা থেকে ছাড়াতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

স্টেডিয়াম ফাঁড়ির ইনচার্জ দারোগা নজরুল ইসলাম তাকে ডেকে পাঠান ফাঁড়িতে। সেখানে জানিয়ে দেয়া হয় যেহেতু থানায় পাঠানো হয়েছে সেকারণে ছেড়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে ২০ হাজার টাকা দিলে তার ছেলেকে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করার অভিযোগে কোর্টে পাঠানো হবে। অন্যথায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে আগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। দারোগার কথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে রিকশাচালক গোলজারের মাথায়। অনেক অনুরোধ করেও মন গলাতে পারেনি দারোগা নজরুল ইসলামের।

দারোগা সাহেব টাকা দেয়ার সময় বেধে দেন দুপুর একটা পর্যন্ত। বাধ্য হয়ে গোলজার রহমান মেয়ে শেফালীর সোনার কানের গহনা বিক্রি করেন। তারপরেও টাকার জোগার না হওয়ায় বাল্ব ফ্যাক্টরির মালিকের কাছ থেকে আরো পাঁচ হাজার টাকা ধার নেন। ১৪ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দারোগাকে জানানো হলে দারোগা সাহেব পোশাক পড়ে একজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসেন শহরের কাঠালতলা এলাকায় এক যুবলীগ নেতার দোকানে। সেখানে যুবলীগ নেতার হাত দিয়ে টাকা নেন তিনি। কিন্তু ২০ হাজার টাকা না পাওয়ায় মাসুদ রানা শিপলুকে ২০১৫ সালে দায়ের করা মন্দিরে চুরি মামলায় (মামলা নং-১৪০) চালান দেয়া হয়। আদালতে গিয়ে রিকশাচালক গোলজার রহমান বিষয়টি জানতে পেরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আর দু’হাত তুলে দারোগার বিচার দাবি করেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।

ঘটনাটি নিয়ে হৈ-চৈ শুরু হলে দারোগা নজরুল ইসলাম রাত ৯টার দিকে মধ্যস্থতাকারী যুবলীগ নেতার দোকানে গিয়ে অনুরোধ করেন বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য। এ সময় তিনি দুই হাজার টাকা ফেরত দেন শিপলুর জামিন করানোর জন্য। এছাড়াও নিজেই আদালতে তদবির করে শিপলুর জামিনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ ব্যাপারে স্টেডিয়াম ফাঁড়ির ইনচার্জ নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার না করে বলেন, ‘তার নাম করে অন্য কেউ টাকা নিতে পারে।’ বিষয়টি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশারকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘টাকা গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণ হলে রিকশাচালক তার টাকা ফেরত পাবে। পাশাপাশি স্টেডিয়াম ফাঁড়ি থেকে নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হবে।’

 

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031