ফ্রেডি ব্লোম বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি সাউথ আফ্রিকার নাগরিক । সম্প্রতি ধূমপান ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পেশায় শ্রমিক ফ্রেডি ব্লোম তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন একটি ফার্ম ও একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে। বেশ কয়েক বছর আগে মদ্যপানও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। নিয়মিত ধূমপান করে আসা ফ্রেডি ব্লোমের ভাষায় ‘এখনো আমি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ধুমপান করি। আমি মনে করি এটি একেকটা জীবননাশকারী পিলের মতো কাজ করে। যা আমি পত্রিকায় পড়ে জানতে পেরেছি।’
তিনি বলেন ‘আমি আমার জীবনে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে চাই। ধূমপান ছেড়ে দিতে চাই। আমি প্রতিজ্ঞা করি যে আমি ধুমপান ছেড়ে দিতে যাচ্ছি। কিন্তু সিগারেটের আসক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, এটা আমার হয়ে ওঠে না। তখন এটা আমার কাছে অনেকটা মিথ্যা বলার মতো হয়। ধূমপানের কারণে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তখন আমি ওষুধ খেতে বাধ্য হই’।
এক ধরণের শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ধূমপানে তিনি আসক্ত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লম্বা ও সুঠোম দেহের এ মানুষটি পেশায় খামার শ্রমিক। গত ৮ মে ১১৪ বছর বয়সে পা দিয়েছেন। যদিও তিনি গিনেজ বুক রেকর্ডে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক জীবিতদের সনদ পাননি এখনো।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মারা যান জ্যামাইকান ১১৭ বছর বয়সী মহিলা ভিলট মোসবর্ন। তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয় প্রবীণ মানুষ। গ্রিনেজ ওয়াল্ড বুকের রেকর্ড অনুযায়ী তার পরে আর কাউকে বিশ্বের প্রবীণ ব্যক্তিদের নামের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি।
স্কুলে যাওয়া না হলেও পড়তে ও লিখতে পারেন ফ্রেডি ব্লোম। সফেদ গোফওয়ালা মি. ব্লোমকে তার দীর্ঘায়ূ হওয়ার কোন রহস্য জানতে চাওয়া হয়ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এর কিছুই জানি না, এটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তিনিই সকল ক্ষমতার মালিক। তিনি (সৃষ্টিকর্তা) চাইলে যেকোন সময় আমার মৃত্যু হতে পারে।’
এই বয়সেও বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো নিজেকে বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলে বলে মনে করি। আমার কোন শারীরিক সমস্যা নেই। আমার হার্টও বেশ শক্তিশালী। তবে আমার পায়ের ক্ষমতা কিছুটা কমে আসছে। আমি আর আগের মতো হাঁটতে পারি না।
মি. ব্লোম বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, সহিংসতা মানষের জীবনে বড় ধরণের পরিবর্তন আনে। যা তিনি তার জীবদ্দশায় প্রত্যক্ষ করেছেন। তার ভাষায়, জীবন অধিক আনন্দময় হয়ে ওঠে, যদি সময়কে ভালভাবে উপভোগ করা যায়। কোন ধরণের মারামারি ও সহিংসতা জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে।
‘আপনি সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকুন এবং যখন আপনি জেগে উঠবেন দেখবেন আপনার সব কাজ শেখানেই পড়ে আছে। কিন্তু সবকিছুই বদলে গেছে’ বলেন ফ্রেডি।
ব্লোমের স্ত্রী জ্যানেট্টা তার চেয়ে ২৯ বছরের ছোট এবং ৪৮ বছর ধরে তার সংসার করে আসছেন। তিনি জানান, তার স্বামী শারীরিকভাবে বেশ সুস্থ আছেন। অনেক বছর আগে হাঁটুতে সমস্যার কারণে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এরপর আর কোন চিকিৎসা নিতে হয়নি।
তিনি উল্লেখ করেন, তার স্বামীর বয়স নিয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। অনেকে তার বয়সের সার্টিফিকেটও দেখতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি অনেক বছর আগে পূর্ব লণ্ডনে গিয়ে জন্ম সনদ নিয়েছেন। যা তার বয়সের সত্যতার প্রমাণ দেয়।
জ্যানেটা বলেন, ‘খাবার হিসেবে ব্লোম স্পেশাল কিছুই খান না। তিনি প্রতিবার খাবারে মাংস খেতে পছন্দ করেন কিন্তু তা না পেয়ে প্রচুর শাকসবজি খান।
এদিকে দেশটির ওয়েস্ট কেপ ডিপার্টমেন্ট অব সোশাল ডেভেলপমেন্টের মুখপাত্র শাইলে নোগবিস বলেন, ‘সরকার ব্লোমের জন্ম সনদ দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে মি. ব্লোসের জন্ম ১৯০৪ সালের ৪ মে। তার বয়স প্রমাণের ডকুমেন্ট হিসেবে এটি যথেষ্ঠ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসি অবলম্বনে