প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা বন্ধ থাকলেও কৌশলে কর্মী-সমর্থকদের ধরে রাখতে নীরব প্রচারণায় রয়েছেন। মূলত ইফতার মাহফিল ও মসজিদ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক প্রচার তৎপরতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণকালে দুই প্রার্থীই জড়িয়ে পড়েছেন বাগযুদ্ধে। বিএনপি প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা বোমা মেরে নাশকতা করতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারকে এ জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ বাড়ি তল্লাসির দাবি করেন জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে, এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাসান সরকার বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছেন।

জানা গেছে, সরকারি দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম তার ছয়দানা এলাকার নিজ বাসায় সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ করেন, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। গত ১৮ মে গাজীপুরকে মাটির সাথে পিষিয়ে দেবার হুমকি দিয়েছেন। এতে আমার আশঙ্কা হয় তার বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকতে পারে। যেহেতু তার সঙ্গে জেএমবি ও জামায়তের যোগাযোগ আছে সে কারণে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে বিএনপির প্রার্থী এবং তার সাথে যারা চলাফেরা করে তাদের বাসায় তল্লাশি চালানো।

 ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সে সময় তার (হাসান) দল জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল মার্কায় সিল মারতে গিয়ে সন্ত্রাসী শফি খুন হয়। ১৯৮৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে জালভোটের মাধ্যমে তিনি নির্বাচিত হন। তিনি ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে না আসার জন্য। সে সময়কার জাতীয় পার্টির আদলে তিনি আতংক সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। জাহাঙ্গীর আলম এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে  সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আসন্ন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার আহবান জানান।

তাছাড়া মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষ এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে ইফতার করেন। এটা তাদের ধর্মীয় অধিকার।

সাংবাদিক সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, উপদেষ্টা মো. শফিকুল আলম, সহসভাপতি আব্দুর রউফ নয়ন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, এস এম মোকসেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, কাজী ইলিয়াস আহমদ, মো. মজিবুর রহমান, সহ দপ্তর সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সেলিনা ইউনুস, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমা আক্তার হুসনা, ও কেন্দ্রীয় নেত্রী নীলিমা আক্তার লিলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অপর দিকে হাসানউদ্দিন সরকার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই ধরনের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো মিথ্যা বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ ও তার কর্মী-সমর্থকদের বিপদগ্রস্ত করে নির্বাচনকে একদিকে ধাবিত করা। আমি অনুরোধ করব, নির্বাচন কমিশনকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাতে আগামী নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়।

মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানিয়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন,  সরকারি দলের প্রার্থী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নির্বাচন বানচাল করার পাঁয়তারা করছেন। তিনি সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান। এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা দাবি করেন তিনি।

বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম বলেন, পবিত্র রমজান মাসে গাজীপুর নগরীতে চলমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জাহাঙ্গীর আলমের আকস্মিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি প্রার্থীর সমালোচনার আয়োজন করার মধ্যে সুগভীর ষড়যন্ত্র নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর আলমের মুখে সমালোচনা মানায় না।

এ ছাড়া সোমবার নগরীর পুবাইল বিন্দানে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে শরিক হন হাসান উদ্দিন সরকার। বিন্দান বিএনপির সভাপতি হারুন সরকারের সভাপতিত্বে ও আনোয়ার মোড়লের সঞ্চালনায় এ ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহশ্রম বিষয়ক সম্পাদক শ্রমিক নেতা হুমায়ুন কবির খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।

স্থানীয় নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, রিয়াজুল হান্নান শাহ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি হুমায়ুন মাস্টার, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, যুগ্ন সম্পাদক মাখাওয়াত হোসেন সবুজ, মাহবুবুল হক গোলাপ, আব্দুস সালাম, ফরিদ আহমেদ, আশরাফ হোসেন টুলু, জয়নাল আবেদীন, সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক পূবাইল ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

এ ছাড়া সকালে হাসান উদ্দিন সরকার নিজ বাস ভবনে দলীয় নেতাবর্মীদের সাথে নির্বাচনী কলা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক টঙ্গী পৌরসভার প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, টঙ্গী থানা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহিম খান কালা, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হাসান সরোয়ার রাব্বিল, আজিজুল হক রাজু মাস্টার প্রমুখ।

পুনঃঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ জুন দেশের বৃহত্তম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ জুন থেকে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031