আরো ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ জেলায় । নিহতরা মাদক কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের  মৃত্যু হয়েছে। গতকাল যারা নিহত হয়েছেন তারা সবাই রোববার রাতে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মারা যান বলে পুলিশ ও র‌্যাব দাবি করেছে। রোববার বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লা ও সাতক্ষীরায় ২ জন করে মারা গেছেন। এছাড়া নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, ঢাকা, পিরোজপুর, চাঁদপুর ও পাবনায় একজন করে মারা গেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা কাতলাপাড়া এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন (৩৬)। নিহত কানা সুমনের বিরুদ্ধে ২০টির অধিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা ছিলো। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিন জানান, রোববার গভীর রাত ২টার সময় তাদের কাছে খবর আসে কানা সুমনের লাশ মুরমার কাতলাপাড়া ব্রিজের কাছে পড়ে আছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মরদেহটি পাঠানো হয়।

তিনি আরো জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে কানা সুমন নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ২টি চাকু ও ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, নাটোরের সিংড়ায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আব্দুল খালেক নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার ভাগনাগরকান্দি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল খালেক সিংড়ার বড় চৌগ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
র‌্যাব-৫ এর সিপিসি-২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা জানান, র‌্যাবের একটি টহল দল নাটোর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কে টহল দিয়ে নাটোর ফিরছিল। পথে সিংড়া উপজেলার ভাগনাগরকান্দি গ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র মাদক লেনদেন করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভাগনাগরকান্দি গ্রামে অভিযান চালায়। এ সময় ওই গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালালে সেখানে উপস্থিত কিছু মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে আব্দুল খালেক নামে এক মাদক ব্যবসায়ী আহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ীদের ছোড়া গুলিতে দুইজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল খালেককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুই র‌্যাব সদস্যকে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লায় পৃথক দুটি ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় এনামুল হক ভূঁইয়া দোলন (৩৫) এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার নুরু (৫৫) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। রোববার দিবাগত মধ্যরাতে জেলার দেবিদ্বারের পশ্চিম ভিংলাবাড়ি এবং সদর দক্ষিণের গলিয়ারা এলাকায় পৃথক এ ঘটনা ঘটে। নিহত দোলন দেবিদ্বারের ভিংলাবাড়ি প্রকাশ্যে মির্জানগর গ্রামের মৃত আবদুল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে এবং নুরু সদর দক্ষিণের কালিকাপুর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে। উভয়ে মাদক আইনে ১২টি করে মামলার আসামি। উভয় ঘটনায় পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়েছেন এবং ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানায়, মাদক উদ্ধার করতে জেলার দেবিদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ পুলিশের একটি দল উপজেলার পশ্চিম ভিংলাবাড়ি এলাকার গোমতী নদীর বাঁধে অবস্থান নেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ী দোলনসহ তার সহযোগীরা পৌঁছলে পুলিশ তাদেরকে আটকের চেষ্টা চালায়। ওসি মিজানুর রহমান জানান, এ সময় দোলনসহ তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও ২৩ রাউন্ড শর্টগানের গুলি চালায়। উভয়পক্ষের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ী দোলন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে কুমেক হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। অপর ঘটনাটি ঘটে রোববার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা এলাকায়। সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, মাদকবিরোধী অভিযানকালে তিনি পুলিশ নিয়ে উপজেলার সীমান্তবর্তী গলিয়ারা এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী নুরু ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও আত্মরক্ষায় গুলি চালালে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নুরু গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধারের পর কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় থানার ওসি (তদন্ত) কমল, এসআই খাদেমুল বাহারসহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জাড়গ্রাম নামক স্থানে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ফরিদ (২৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। নিহত ফরিদ ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই সড়কের উপ-শহর পাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, রাত ১টার দিকে জাড়গ্রামে গোলাগুলির শব্দ শুনে টহল পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছে। সেখানে একজনের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। প্রথমে লাশটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা হলেও পরে লাশটি ফরিদের বলে তার স্বজনরা শনাক্ত করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১ কেজি গাঁজা, ২০ বোতল ফেনসিডিল ও ৬ জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরায় দুই মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার আগুনপুর নামক স্থানের এক চিংড়ি ঘেরের পাশ থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি তারা তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। মাদকসহ মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে তারা নিহত হয়েছে। নিহতেরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের আসগর আলির ছেলে খলিলুর রহমান ওরফে পুটে সরদার (৫০) ও শহরের মধুমোল্যাডাঙ্গির এরফান কারিগরের ছেলে এমদাদুল হক কারিগর (৪৮)।
নিহত এমদাদের ভাই মফিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী অঞ্জনা খাতুন জানান, পুলিশের খাতায় এমদাদ অপরাধী কিনা তা তাদের জানা নেই। তবে গত বুধবার রাতে তারাবির নামাজের পরপরই সাদা পোশাকধারী কয়েক ব্যক্তি প্রাচীর টপকে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। পরে তারা এমদাদকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে ছাড়ানোর জন্য তারা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে যোগাযোগও করেন। তবে শনিবার রাত ৯টার দিকে তাদের বলা হয় গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করেনি। তারা থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন।  একইভাবে লক্ষীদাড়ি গ্রামের আজগার আলী জানান, তার ছেলে পুঁটে সরদার রোববার সাতক্ষীরা জজ কোর্টে একটি মামলায় হাজিরা দিতে যায়। দুপুর ১টার দিকে কোর্টের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। রাতভর ডিবি পুলিশের কার্যালয় ও সদর থানায় খোঁজ নিয়েও কোনো সন্ধান মেলেনি ছেলের।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। বাদশা ফরিদগঞ্জের গোবিন্দপুর গ্রামের আবদুর রশিদ ছৈয়ালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১০টি মাদক মামলা রয়েছে। ফরিদগঞ্জ থানার ওসি শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের একটি দল গভীর রাতে অভিযানে বের হয়ে গুপ্টি ব্রিজ এলাকায় গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপর হামলা ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয় আবু সাঈদ বাদশা। বাদশাকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে জানান, বেড়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইজ্জত আলী প্রামাণিক (২৮) নামে একজন মারা গেছেন। তিনি উপজেলার হাটুরিয়া পূর্বপাড়ার মৃত আজাহার আলী প্রামাণিকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগে ১৪টি মামলা রয়েছে। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, রাত দেড়টার দিকে বেড়া থানা পুলিশের একটি দল টহল দেয়ার সময় পৌর এলাকার তেঘরী মহল্লার একটি বাগানের সামনের রাস্তায় একদল ডাকাত দেখতে পায়। তারা রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশ সদস্যরা গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা গুলি ছোড়ে ও ককটেল ফাটায়। তখন পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। ‘বন্দুকযুদ্ধে’র একপর্যায়ে ডাকাত দল পিছু হটলে ঘটনাস্থলে ইজ্জত আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031