মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত অভিযান চলবে। এ অভিযানের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।’ মাদকবিরোধী অভিযানে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে নিহত হওয়ার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আর কত দিন অভিযান চলবে, সে বিষয়ে কোনো সময় সীমা দিতে পারেননি।
রবিবার সচিবালয়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
কামাল বলেন, ‘আমরা মাদকের বিষয়ে অলআউট প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছি। এই প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা যেটা মনে করি এটা করলে ভালো হবে, আমরা সেখানেই যাব।’
গত ৪ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামে র্যাব। পরে এই অভিযানে যোগ দেয় পুলিশ। শুরুর দিকে প্রাণহানি কম থাকলেও গত আট দিনেই নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮০। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯০ এক কোটায়।
২০০৪ সালে সেনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্রসফায়ার শুরুর পর থেকে যে রকম বর্ণনা এসেছে, এবারের মাদকবিরোধী অভিযানেও একই রকম বর্ণনা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সন্দেজভাজনকে আটকের জন্য অভিযানে গেলে বা তাদেরকে নিয়ে অভিযাগে গেলে গোলাগুলির এক পর্যায়ে নিহত হচ্ছেন সন্দেহভাজনরা।
যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই বর্ণনা কখনও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। আর বিএনপি এই অভিযানের তীব্র সমালোচনা করছে। পুলিশ যেটাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলছে, বিএনপি তাকে বলছে হত্যা। তারা সন্দেজভাজনদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার পক্ষে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, এদেরকে বিচারের কথা বলা যত সহজ, কার্যক্ষেত্রে তা ততটাই কঠিন। কারণ, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে মানুষকে রাজি করানো যায় না। এ কারণে অনিস্পন্ন মাদকের মামলার সংখ্যাও বাড়ছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারি অধিদপ্তর ব্যর্থ কি না, এমন প্রশ্নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যর্থতা আর সফলতা বলে কোন কথা না। এমন প্রশ্ন আসেনি। প্রশ্নটা হচ্ছে আমরা মাদকের ভয়াবহতায় আক্রান্ত হয়েছি, এটা বাস্তবতা।’
‘এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী আজকে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। আমরা সেই অনুযায়ী সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সামাজিকভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন সমাজপতিদের, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এবং জনগণকে এর সাথে সম্পৃক্ত করেছি। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আমরা যে লিস্ট তৈরি করেছি তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।’
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। জিরো টলারেন্সের অর্থ হচ্ছে আমরা সব কিছুই করব। আপনাদের কাছেও যদি কোন তালিকা থাকে তা আমাদেরকে দিন। আমাদেরকে সমৃদ্ধ করুন। আমরা ব্যবস্থা নেই।’
এই অভিযান থেকে কেউ বাদ যাবে না বলে আবারও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আপনারা ইতিমধ্যেই প্রমাণ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি (শেখ হাসিনা) উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এখানে আমাদের একজন সংসদ সদস্য জেলে রয়েছে। সরকারদলীয় বা বিরাট সমাজপতি সেগুলো এখানে বিবেচ্য নয়। সে যেই হোক অপরাধ করলেই তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সব গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস প্রধান, জননিরাত্তা ও সেবা বিভাগের সচিব এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা।