বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)’ ডিগ্রি নিলেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে শনিবার বেলা ১২টা ২০মিনিটে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক এই উপাধি দেয়া হয়।
শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন এবং গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই উপাধি দেওয়া হয় বলে সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী জানান।
শেখ হাসিনা তাকে দেওয়া এ সম্মান ‘সমগ্র বাঙালি জাতিকে উৎসর্গ’করার ঘোষণা দেন।
রাজনৈতিক জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মননা পদক পেয়েছেন। এর কোনটি পেয়েছেন ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য, আবার কোনটি পেয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যের জন্য।
এর মধ্যে জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের এবারেট ডান্ডি ও ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি।
শেখ হাসিনার যেসব পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার (২০১৬), প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন (২০১৬), চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ (২০১৫), আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পদক (২০১৫), সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার (২০১৪), শান্তি বৃক্ষ (২০১৪), রোটারি শান্তি পুরস্কার (২০১৩), GAVI পুরস্কার (২০১২), সাউথ- সাউথ পুরস্কার (২০১১), ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০১০), এমডিজি পদক (২০১৩ ও ২০১০), M K Gandhi পুরস্কার (১৯৯৮), CERES মেডেল (১৯৯৯), Pearl S. Buck পুরস্কার (২০০০), মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮), ইউনেস্কো’র Felix Houphouet- Boigny শান্তি পুরস্কার (১৯৯৮) ইত্যাদি।
এসব অর্জনের পাশাপাশি শেখ হাসিনা নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর একশ নারীর তালিকায় ৩৬তম স্থান পান শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে তিনি ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেন।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু এয়ারপোর্ট থেকে দুর্গাপুর কাজী নজরুল বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন৷ বেলা ১১টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে সড়কপথে বেলা ১২টার দিকে আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান তিনি৷
ডি-লিট সম্মাননা নেয়ার পর শেখ হাসিনা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক পাওয়া ২০ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে শেখ হাসিনা কলকাতায় ফিরে যাবেন। বিকালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দক্ষিণ কলকাতার এলগ্রিন রোডের বাসভবনে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর রাতে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার কলকাতা যান শেখ হাসিনা। সেখানে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে শান্তিনিকেতনে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেন তিনি। পরে সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
বিশ্বভারতীতে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সেরেই কলকাতায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী চলে যান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মভিটে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে।