র্যাব মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছে । অভিযানে ডগ স্কোয়াড দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। মাদক সেবন ও বিক্রির দায়ে সেখান থেকে অন্তত ৪৫০ জনকে আটক করেছে র্যাব। এদের যাচাই-বাছাই শেষে ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। অবশিষ্ট ৭৬ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, মাদকের মূল হোতারা এলাকায় থাকে না। ঢাকার বিভিন্নস্থানে বসবাস করে। তাদের লোকজন দিয়ে ক্যাম্পের মধ্যে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এ ছাড়াও প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ায় জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা চলে। সারা দেশে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের অংশ হিসাবে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়।
স্থানীয় ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেনেভা ক্যাম্পের চারদিক প্রায় ২শ’ র্যাব সদস্য ঘিরে ফেলেন। এরপর সেখানে এস্কট করে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। অভিযানে ভ্রামমাণ আদালতের তিন জন মাজিস্ট্রেটও ছিলেন। ক্যাম্প থেকে যারা বের হচ্ছিল তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। এ সময় র্যাব মাদকের সন্ধানের জন্য ডগ স্কোয়াড দিয়ে বাসা বাড়ি ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন অলিগলিতেও অভিযান চালায় র্যাব।
অনেকেই রাস্তায় মাদক ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় মাদক বিক্রয় ও সেবনের দায়ে প্রায় ৪৫০ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে চার জন নারীও ছিল। পরে তাদের উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের যাচাই-বাছাই শেষে ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে র্যাবের ভ্রামমাণ আদালত ৭৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। অবশিষ্ট ৭৬ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি এবং সেবনের কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়। গ্রেপ্তার ও সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক মেজর আবদুল্লাহ আল মেহেদী। অভিযানের কারণে ক্যাম্পের অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে ক্যাম্পের বাইরে আসেন। তাৎক্ষণিক অভিযানের পাশাপাশি র্যাব ওই এলাকায় ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ লিফলেট ও বড় পোস্টার বিতরণ করে। ক্যাম্পের ভেতরের বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে পোস্টার ও লিফলেটগুলো গাম দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়। হ্যান্ড মাইক দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী এবং সহযোগীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জেনেভা ক্যাম্পে অভিযানের পর তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা আজকের নয়, অনেক পুরনো অভিযোগ। অনেকের ধারণা ছিল ঘনবসতি এলাকার কারণে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা কঠিন। আমরা সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একাধিক টিম নিয়ে অভিযান চালিয়েছি।
জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে কোনো মাদক ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, যারা জেনেভা ক্যাম্পের মধ্যে মাদক ব্যবসা করছে তারা যেন মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়। যারা এই ব্যবসা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি জেনেভা ক্যাম্পের মধ্যে মাদক দমনে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। অভিযান সফল এবং জেনেভা ক্যাম্পের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হয়েছে কী-না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অভিযান সফল হয়েছে। মাদক বিক্রয় এবং সেবনের দায়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পের মূল হোতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে জেনেভা ক্যাম্পে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সংগঠন স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী জানান, জেনভা ক্যাম্পে যে মাদকের ব্যবসা হয় তা আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করেছি। ক্যাম্পের মধ্যে ভাসমান মাদক ব্যবসায়ী আছে। তিনি আরো জানান, এই ক্যাম্পের মাদক ব্যবসার মূল হোতা হচ্ছে ইশতিয়াক ও নাদিম। তাদের লোকজনই এই এলাকায় মাদক ব্যবসা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসপিজিআরসির আরেক সদস্য জানান, জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা হয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। এখানে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত আছে। জেনেভা ক্যাম্পে দুই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইশতিয়াক ও নাদিম এলাকায় বিলাসবহুল গাড়িতে করে আসে। তারা এলাকায় থাকে না। অন্য এলাকায় বাসা নিয়ে থাকে। তাদের প্রায় ২০ জন সহযোগী আছে।
তারা হলো- আদনান, মনির, তানভীর, সেলিম, সাথী, রাজিয়া, মুন্না, সীমা, রাজা, রাকিব, মুক্তার, কসাই মুন্না, লাড্ডু বিলালসহ আরো অনেকেই। মাদক বিক্রয় করার দায়ে তাদের প্রত্যেক মাসে মোটা অঙ্কের একটি মাসোহারা দেয়া হয়ে থাকে। ক্যাম্পের মধ্যে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সদস্যরা যাতায়াত করলেও তারা নির্বিকার অবস্থায় থাকেন। তাদেরকে ধরার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেন না।
ক্যাম্পের বাইরের বাসিন্দা স্থানীয় যুবলীগের মোহাম্মদপুর থানা কার্যনির্বার্হী সদস্য ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের জানান, জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। এর প্রভাব ক্যাম্পের আশপাশে পড়ছে। অনেক উঠতি তরুণ মাদকে আসক্ত হচ্ছে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীর জানান, জেনেভা ক্যাম্পে তিন থেকে চার জন মাদক ব্যবসার মূল হোতা রয়েছে। অভিযানে অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ী ও সেবনকারী ধরা পড়েছে।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক মেজর রইসুল আযম মনি জানান, জেনেভা ক্যাম্পে অভিযানের পাশাপাশি র্যাব মাদক বিরোধী বিভিন্ন লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করেছে। এই লিফলেট ও পোস্টার বিলিতে আমরা স্থানীয় জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।