দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক হলেও তিস্তা চুক্তি এই সফরের উদ্দেশ্য নয় বলে জানিয়েছে সরকার আগামী শুক্র ও শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গ অবস্থানকালে।
সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হবে। সাত বছর আগে এই মমতার আপত্তিতেই ঝুলে যায় চুক্তি।
দুই দেশের গণমাধ্যমেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ঝুলে থাকা চুক্তি এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে নানা সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। কারণ, গত বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এই সফরে তিস্তার জট খোলার সম্ভাবনা কতটুকু-এমন প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, ‘যথা সময়ে প্রকাশ্য। কী করব, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যায় না। কিছু করার নেই।’
‘আসলে এই সফরের উদ্দেশ্য আলাদা।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি ও নেতাজী যাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
সফরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হবে কি না এবং জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সাহায্যের দিক থেকে ভারত সবচেয়ে এগিয়ে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত প্রথম থেকেই আমাদের পাশে ছিল। তারা সাহায্য করেই যাচ্ছে।’
‘রোহিঙ্গারা যেন তাদের দেশে ফিরে থাকতে পারে সেজন্য অবকাঠামোগত কাজ করে যাচ্ছে ভারত। এ নিয়ে তাদের সাথে মিয়ানমার সরকারের একটা চুক্তিও হয়েছে। গত দুই মাস আগে অবকাঠামোগত কাজে ভারত নেমে পড়েছে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান আদৌ হবে কি না এমন প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। তবে সময় কত লাগবে এটা বলা যাবে না। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারকে আগের চেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করছে।’
‘চীন ও রাশিয়া সরকারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তারা বলেছে তারা এ সমস্যা সমাধানে আমাদের সঙ্গে থাকবে।’
দুই দিনের সফর শেষে শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে যা হবে
দুই দিনের সফরে প্রথম দিনে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবনের’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে থাকবেন নরেন্দ্র মোদিও।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অুনষ্ঠানেও যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে অংশ নেবেন তিনি। সেখানে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেয়া হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০ কোটি রুপির সমতুল্য এককালীন স্থায়ী তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিলের লভ্যাংশ হতে প্রতিবছর বাংলাদেশি ১০ জন শিক্ষার্থীকে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ফেলোশিপ প্রদান করা হবে।’
‘এ নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।’
বাংলাদেশ ভবনে যা থাকছে
বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত এই ভবনে রয়েছে ৪৫০ আসনের প্রেক্ষাগৃহ, যা বিশ্বভারতীতে থাকা প্রেক্ষগৃহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসভিত্তিক সংগ্রহশালার পাশাপাশি ভবনটিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থের সংগ্রহ নিয়ে একটি পাঠাগারও তৈরি করা হয়েছে।
এতে রয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি বই। এসব বইয়ের বেশিরভাগই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর। এছাড়া কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান নিয়েও থাকছে নানা বই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারগারের দিনলিপি ইত্যাদি বইও স্থান পাবে এ লাইব্রেরিতে।
ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুর্যাতল স্থাপন করা হয়েছে।
দুই বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ভবনের আয়তন চার হাজার ১০০ বর্গ মিটার। ২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বৈঠকের পর এ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০১৪ সালের মার্চে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার এ ভবন নির্মাণে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বাংলাদেশ অর্থ বরাদ্দ দিলেও ভবনের জমি দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।