সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দেশে কয়েকটি ভালো নির্বাচনের পর খুলনা সিটি করপোরেশনে একটি অস্বচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বলে মনে করছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনায় শান্তিপূর্ণ কারচুপি হয়েছে যা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নতুন মডেল। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করে সুজন। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। এতে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রী সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় খুলনা ছাড়া সব নির্বাচন ভালো হয়েছে।
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বিকাশ ঘটবে। কিন্তু দিন দিন আমরা এই গণতান্ত্রিক বিকাশের চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে সকল প্রার্থী হলফনামার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া। নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম হয়েছে তার জন্য কারও অভিযোগ দায়ের করার অপেক্ষা না করে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেয়াটা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে আমরা তা করতে দেখিনি। সত্যিই এটা হতাশাজনক। সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুজন নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ না করলেও পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, তথা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেনি এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পিচফুলি রিগিং (শান্তিপূর্ণ কারচুপি) হয়েছে। এটিকে একটি নতুন মডেলের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করা যায়। নির্বাচনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা সহিংসতা হয়তো ততটা দেখা যায়নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নানা ধরনের অনিয়ম ঠিকই হয়েছে। নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার অভাব দেখা যায় এবং ভোটারদের এক ধরণের ত্রাসের মধ্যে রাখা হয়েছিল। যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারাও তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। কারণ তাদের সরকারের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করে সংস্থা চালাতে হয়। তবে মিডিয়া এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। মিডিয়াগুলোকে অনেক বিশ্লেষনাত্বক প্রতিবেদন করতে দেখা গেছে, যা ইতিবাচক। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ইসি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র ভোট দিয়েছে। তার ভোট দেয়ার কথা ছিল আরো ১২ বছর পরে। খুলনা সিটি নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তারা তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয়মাস আগে এই নির্বাচনটা ছিল কমিশনের জন্য একটা পরীক্ষা। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে তাদের যে সাহস দেখানো দরকার ছিল তা তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে পারবে এটা জনগণ মনে করে না, আমিও করি না।