গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নতুন উদ্ভাবনী দুলালী সুন্দরী বেগুনি ধানের ক্রুপ কাটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার আলোচিত দুলালী সুন্দরী বেগুনি ধানের ক্রুপ কাটিং উপলক্ষে এক আলোচনা সভা রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের দুলালী বেগমের উঠানে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া’র সভাপতিত্বে মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা- কৃষিবিদ শওকত ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পেশনের সিনিয়র পরিচালক- মাজহারুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের ধান গবেষণাগারের বিজ্ঞানী মেহেদী হাসান, সুন্দরগঞ্জ প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক-এ মান্নান আকন্দ, পিপিআই সাদেক হোসেন, উপ-সহকারি কৃষি অফিসার- জামিউল ইসলাম, লিটন মিয়া, নুরুল হুদা, দুলালী বেগম প্রমূখ। এর আগে অতিথিগণ ধানের ক্রুপ কাটিং করেন। বিঘা প্রতি দুলালী সুন্দরী বেগুনি ধানের ফলন হয়েছে ২৫ মণ (শুকনা)। যা অন্যান্য ব্রি- জাতের ধানের চেয়ে ফলন অনেকটা বেশি। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান- অন্যান্য ধানের চেয়ে বেগুনি ধানের ফলন ভালো হয়েছে। যেহেতু এবারেই প্রথম এই ধানের চাষাবাদ করা হয়। সে কারণেই ধানের গুণগতমান সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ধান শুকানো এবং চাল তৈরি করার পর এর পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে নিরুপণ করা সম্ভব হবে। ধান গাছের গড় উচ্চতা ছিল ৯০ সেন্টিমিটার। গোছা প্রতি ১৮ হতে ২৮টি শীষ ছিল। পাশাপাশি একটি শীষ ১৬০ হতে ৩১৩টি পর্যন্ত ধান পাওয়া গেছে। রামজীবন ইউনিয়নের আইপিএম কৃষক ক্লাবের কৃষাণী দুলালী বেওয়া। তিনি ২০১৭ সালে বিভিন্ন ধান ক্ষেত থেকে বেগুনি ধান সংগ্রহ করে বোরো মৌসুমে মাত্র এক শতক জমিতে কৌতুহলবশত এই ধান চাষ করেন। চাষের পর ধানের রংয়ে ভিন্নতা দেখে তার কৌতুহল আরো বেড়ে যায় এবং উৎপাদিত ধান থেকে ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমে তিনি স্থানীয় উপ-সহকারি কৃষি অফিসার ও এসকেএস ফাউন্ডেশনের এমএম ডাব্লিউ ডাব্লিউ প্রকল্পের ফিল ফ্যাসিলেটর হোসনেআরা বেগমের পরামর্শে প্রায় ২৫ শতক জমিতে ওই ধানের আবাদ করে। কৃষাণী দুলালী বেগম জানান- এই ধানের চারা রোপনের পর তিনি উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন। কৃষি অফিসারগণ তাকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম আরও জানান- এই বেগুনী ধানকে চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজ পরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজ পরিবারের বাইরে এই ধানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদন্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট যোদ্ধাদের সম্মানে একত্রে এ ধানের ভাত খেয়ে থাকত। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারনে এ ধানের রং বেগুনী হয়। ব্লু-বেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান বেশি। এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস ও অ্যালজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর। এটি বাংলাদেশে চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন কৃষি অফিসার।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031