মধুমাসের অন্যতম ফল লিচু জৈষ্ঠ্যের আগমন হয়েছে দিন তিনেক হলো। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পাকতে শুরু করবে । কিন্তু রমজান শুরু হয়ে যাওয়ায় বেশি বিক্রির লোভে বাগানের কাঁচা লিচুই বাজারে আনছেন গাজীপুরের পাইকার ও কৃষকরা। এতে মধুমাস জৈষ্ঠ্যের অন্যতম রসালো ফল লিচুর প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লিচু প্রেমীরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার কেওয়া, টেপিরবাড়ী, বারতোপা, রাজাবাড়ি, প্রহলাদপুর, পেলাইদ, উত্তর পেলাইদ, তেলিহাটিসহ পুরো উপজেলা জুড়েই লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে এবার।
স্বাদ এবং আকারে শ্রীপুরের উৎপাদিত লিচুর বিশেষ সুনাম রয়েছে দেশজুড়েই। প্রতি বছর জৈষ্ঠ্যে মাস জুড়েই দেশের বিভিন্ন এলাকার লিচুর পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত থাকে শ্রীপুর। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটটি ভিন্ন। কিন্তু রমজানে ভালো বিক্রির লোভে গত কয়েকদিন ধরে কৃষক ও পাইকাররা অপরিপক্ক লিচু গাছ থেকে সংগ্রহ করে তা বাজারে তুলছেন। আর এতেই লিচু প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লিচু প্রেমীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ৭২৪হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এই চাষের ওপর নির্ভর করেন কয়েক শ কৃষক।
উপজেলার লিচু চাষের সমৃদ্ধ গ্রাম কেওয়া ও টেপিরবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর একাধিক গাছ। কারো বাড়িতে লিচুর গাছের বাগানও রয়েছে। প্রতিটি গাছেই ঝুলছে থোকা থোকা লিচু গুলো যা এখনও অপরিপক্ক। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ঝুলে থাকা লিচু গুলো সাজবে লাল-গোলাপী সাজে। কিন্তু রমজান মাসে লিচুর চাহিদার কথা ভেবে ও আবার কালবৈশাখী ঝড়ে লিচ নষ্ট হয়ে লোকসানের আশঙ্কায় অপরিপক্ক লিচু গুলোই বাজারজাত করছেন পাইকার ও কৃষকেরা।
কেওয়া গ্রামের লিচুর বাগান মালিক এনামুল হক আকন্দ জানান, এ বছর তার সাত বিঘার দুটি বাগান রয়েছে। তার বাগানের লিচুগুলো পাকাতে কিছুদিন সময় লাগবে। রমজান শুরু হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায় লোকসানের ভয়ে তিনি নিজে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করে এ লিচুগুলোই বাজারে বিক্রি করছেন। প্রতিটি লিচু বর্তমান বাজারে তিনি তিন টাকা করে দাম পাচ্ছেন। আর পোশাক কারখানা সমৃদ্ধ শ্রীপুরে এর বেশির ভাগ ক্রেতাই পোশাক শ্রমিকেরা।
শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তায় লিচু কিনতে আসেন একটি মোবাইল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সোহেল রানা। তিনি জানান, বাজারে যে লিচু পাওয়া যাচ্ছে তার বেশির আবাত্তি (অপরিপক্ক)। আর কিছুদিন গাছে থাকলে লিচুর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যেত। এখন যে লিচু গুলো পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই টক।
টেপিরবাড়ী গ্রামের কায়সার মৃধা খোকন, তার ১৬বিঘার জমির ওপর লিচুর একটি বাগান রয়েছে। যা তিনি ৬লাখ টাকা বিক্রি করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, লিচুর পুরো সময়ই রমজান মাসে পড়েছে। এদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে লিচুর কিছু ক্ষতি হওয়ার পর এখন রমজান মাসকে ঘিরেই অপরিপক্ক লিচু বাজারে নিচ্ছে তাঁর পাইকাররা।
তবে, লিচুর পাইকার ব্যবসায়ী নুর ইসলাম জানান, এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে পুরোদমে বাজারে লিচু লাগবে। এখন বাজারে লিচুর দাম একটু চড়া, রমজানে এ চড়া দাম নেমে যেতে পারে। তাই রমজানের আগেই বাগান থেকে দেখে দেখে পাকা পাকা কিছু লিচু বাজারে তুলছি বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএসএম মূয়ীদুল হাসান বলেন, লিচুর ভালো ফলনের আশায় কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। লিচু পরিপূর্ণভাবে পাকা আগে তাঁর পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না। লিচু পরিপক্ক হলেই তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে হয়।