বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল সাংবাদিকদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুটি পত্রিকা না পড়ার কথা বলেছেন সেটাকে তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করেন । তবে পত্রিকা দুটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করতে চাইলে তিনি এর প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন এই সাংবাদিক নেতা।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের ‘একাত্তর জার্নাল’ নামের টক শোতে তিনি এই কথা বলেন।
ফারজানা রুপার সঞ্চালনায় টক শোতে মূল আলোচক ছিলেন বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজ এডিটর মাসুদ কামাল ও আমাদের অর্থনীতির সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি। বাসা থেকে লাইভে যোগ দেন মনজুরুল আহসান বুলবুল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রথম সারির দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পত্রিকা দুটি ‘ষড়যন্ত্র’ করেছে বলে অভিযোগ সরকারপ্রধানের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি পত্রিকা আমি পড়িও না, রাখিও না, গণভবনে ঢোকা নিষেধ। দরকার নাই আমার। ওই সার্কাসের গাধার মতো যারা বসেই থাকে দড়ি ছিঁড়বে কবে আর পতাকা পাবে কবে, যাদের দিয়ে আমার দেশের জন্য কল্যাণকর কাজ হবে না, তাদের আমার দরকার নাই।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘আপনি যেভাবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ঠিক সেভাবেই বলেছেন। দুটি পত্রিকা তিনি পড়েন না এবং ওই পত্রিকা দুটি সম্পর্কে উষ্মার কথা বলেছেন। এটা তার ব্যক্তিগত মত, কেন তিনি পত্রিকা দুটি পড়েন না। তিনি যদি পত্রিকা দুটি রাষ্ট্রীয়ভাবে বাতিল করতে চান, নিশ্চয় আমরা প্রতিবাদ করব। একজন গ্রাহক হিসেবে তিনি মনে করেন এই পত্রিকা দুটির বিশ্বাসযোগ্যতা তার কাছে নেই। এজন্য এই পত্রিকাদুটি তিনি পড়েন না।’
‘শেখ হাসিনা সাংবাদিক পরিবারের সদস্য এটা তিনি এর আগেও বলেছেন’ উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, ‘আপনারা জানেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকতার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাকের সঙ্গে পেশাদারভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই কথাটাই তিনি কথা প্রসঙ্গে বলেন, তিনিও গণমাধ্যম পরিবারের একজন।’
‘প্রধানমন্ত্রী মনে হয় কথাটি সিরিয়াসলি বলেননি’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না ওই দুটি পত্রিকায় কি সাংবাদিকতা হয় না? হয়তো, ওখানে তো সাংবাদিকরাও চাকরি করেন। যে সাংবাদিক চাকরি করেন উনি জানতে পারলেন যে তার লেখাটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায় না। প্রধানমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি সবার প্রধানমন্ত্রী। যে উনাকে ভোট দেয়নি তারও, আর যে ভোট দিয়েছে তারও।’
মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় উনি কথাটি সিরিয়াসলি বলেননি। সিরিয়াসলি বললে কিন্তু অনেক কিছু বলা হয়ে যায়। এটা কিন্তু উনার একটা বৈশিষ্ট্যও বটে। উনি যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন, তখন উনি কিন্তু অনেকটা আটপৌরের ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখি। অনেক সময় ফান করতেও দেখেছি। উনি ওরকম করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন বসেন, তখন আনুষ্ঠানিকতা কম।’
‘তো মাসুদা ভাট্টি যেভাবে বললেন সমালোচনাটা উনার জন্য ভালো। আমি এটাই বরং মানতে চাই যে, পত্রিকাটা উনার বেশি সমালোচনা করে, সেটাই বেশি করে পড়বেন।’
‘সংবাদকর্মীদের জন্য উনি কিছু করার চেষ্টা করেন’
শেখ হাসিনা গণমাধ্যমকে যেভাবে মূল্যায়ন করেন সেটিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘আলোচনা বা সমালোচনা তখনই হয়, যখন ঘটনাটি ঘটে। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা দেখতে পাই, উনি সংবাদমাধ্যমে, সংবাদকর্মীদের সাথে খুব স্বচ্ছন্দবোধ করেন। এরকম খুব কম প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রনায়ককে দেখেছি যারা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এতটা ঘনিষ্ঠ ও একাত্মবোধ করেন। আজকে খুব সুন্দর করে বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীর ৮৮ নম্বর পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, কিছুদিন তিনি (বঙ্গবন্ধু) সাংবাদিকতাও করেছেন। সেই সূত্র ধরে প্রধানন্ত্রী বলেছেন ‘আমি কিন্তু আপনাদের পরিবারের একজন।’
মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘দেখা যায় বারবার সংবাদপত্র এবং সংবাদকর্মীদের জন্য উনি কিছু করার চেষ্টা করেন। তার গত দশ বছরের শাসনামলে দুই দুটো ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে উনার যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এই সম্পর্কটা বাংলাদের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বলেন এটা খুবই আশাপ্রদ ও জরুরি।’
গণমাধ্যমের সঙ্গে অন্য সরকারের বৈরিতা তৈরি হতো উল্লেখ করে মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘বাংলা ভাইয়ের বেলায় বলা হয়েছিল, এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা, কতগুলো সাংবাদিক হত্যার কথা আমরা মনে করতে পারি একটি নির্দিষ্ট সরকারের আমলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এই জিনিসগুলো হয় না।’
মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজকে (বৃহস্পতিবার) বলেছেন সাংবাদিকদের অনেকে তাকে পছন্দ করেন না। দেখুন গণমাধ্যমে পছন্দ না করাটা কিন্তু এক ধরনের ‘ব্লেসিং সো’। ‘ব্লেসিং সো’ এই কারণে তাহলে উনি জানতে পারেন উনারও সমালোচনা আছে, তখন তিনি নিজেকে শুধরাতে পারেন।’
যারা সমালোচনা করেন সেই পত্রিকাগুলো তো তিনি পড়েন না, তাহলে কীভাবে ব্লেসিং সো হবে- সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, পত্রিকাটি উনি পড়েন না বা গণভবনে পত্রিকাটি যায় না, কিন্তু এই পত্রিকাটিকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। এই পত্রিকা দুটিতো বাংলাদেশে তাদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সুতরাং অবস্থান তৈরি করার ফলে তারা যেসব রিপোর্ট করেন বা সমালোচনা করেন সেটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো না কোনোভাবে যায় এটি নিশ্চিত। সংসদেও এই পত্রিকা দুটি নিয়ে আলোচনা হয়। কথা হচ্ছে গণমাধ্যমকে সেই আলোচনার জায়গায় নিয়ে যাওয়া, পজেটিভ বা নেগেটিভ আমি সেই জায়গায় যাচ্ছি না। কিন্তু প্রধামন্ত্রী যে আজকে বললেন গণভবনে যায় না এটিও কিন্তু এই দুটি পত্রিকার এক ধরনের প্রচারই হলো বলে আমি মনে করি।’