সারাদিনের সংযম শেষে মাগরিবের আজানের পর ইফতার শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস। । আর রোজায় ইফতার বললে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে প্লেট ভর্তি পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, বাটি ভর্তি ছোলা, থালা ভরা জিলাপি আর মুড়ি মাখা। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে ইফতারের মেন্যুতে চলে আসছে এসব পদ। অনেকেতো বিশ্বাসই করেন ভাজাপোড়া আর ঝাল মিষ্টি এসব খাবার ছাড়া তাদের ইফতার অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি এই গরমে এসব খাবার কতটা নিরাপদ? সারা দিন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার পর ইফতার দিনের প্রথম আহার। এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে ইফতার মুখরোচক হবার চেয়েও বেশি হতে হবে স্বাস্থ্যকর। এবারের রোজায় যেহেতু গরম অনেক বেশি। তাই এবারের রোজায় দরকার হবে বাড়তি সতর্কতা। থাকতে হবে একটু বেশি সচেতন। কেননা এসময়ে শরীরে থাকবে পানির প্রচন্ড তৃষ্ণা এবং দরকার পড়বে শারিরীক শক্তিও। কিন্তু একটু বেছে না খেলে এদুটোর কোনোটাই ঠিক মতন পূরন হবে না। থেকে যাবে পুষ্টির ঘাটতি, আবার শরীরের উপর দিয়ে ধকলও যাবে অনেক।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকাটাইমসের পাঠকদের বিশেষ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ গার্হস্ত্য অর্থনীতি কলেজের প্রভাষক মুনমুন খান। তিন মনে করেন এবারের রোজায় ভাজা পোড়া খাবার একদমই না খেলে সবচেয়ে ভালো করবেন। আর যদি খেতে হয়ই, তাহলেও খুবই অল্প পরিমানে, এবং বেছে বেছে। কেননা এসব খাবারে লাভতো নেইই, বরং শরীরের ক্ষতি করে। তিনি বলেন, ‘এবারের রোজায় যেহেতু গরম বেশি তাই ইফতার হতে হবে মৌসুমি ফল সমৃদ্ধ। এতে শরীরের পানির চাহিদাও পূরণ হবে আবার প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাওয়া যাবে।’ আর এজন্য দামী দামী বিদেশি ফলও দরকার নেই।
মুনমুন খান জানান দেশি ফল যেমন- আম, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, লিচুর মত দেশীয় ফলে ভরা এবং দামও হাতের নাগালের মধ্যে।
যেহেতু এখন গরমের দিন এবং একটানা ১৫ ঘণ্টা পানি পান করা হয় না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ তৃষ্ণার্ত থাকে। ইফতারের শুরুতেই অনেকে তৃষ্ণা মেটাতে একগাদা পানি খেয়ে নেয়। মুনমুন খান বলছেন, ‘এটা একেবারেই ঠিক না। ইফতারের শুরুতে এক ঢোক পানি খেতে হবে শুধু। তারপর অন্যান্য শক্ত খাবার যেমন, চিড়া ভেজানো, ফালুদা বা স্যুপ জাতীয় খাবার খেতে হবে অবশ্যই। এরপরই ফলমূল খাবেন। আগেই ফল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে।’
যা খাবেন
এছাড়াও ইফতারের শুরুতে সবাই খেজুর খায় এটা, খুবই ভালো অভ্যাস এবং ভীষন রকম স্বাস্থ্যসম্মত। আর ইফতারে রান্না ছোলার চেয়ে কাঁচা ছোলা খাওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এসময়ে শরীরে প্রচুর শক্তির দরকার। যারা কাঁচা ছোলা খেতে পারেন তাদের উচিত ছোলা আগে থেকে ভিজিয়ে রেখে সেটা খাওয়া।এটি শরীরে তাৎক্ষণিক ভাবে শক্তি জোগাবে’।
ইফতারের আধা ঘণ্টা পর থেকে তিনি প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। সঙ্গে অন্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়ার। এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললেই রোজায় শরীর ভালো থাকবে, স্বাস্থ্যের লম্বা মেয়াদী কোনো ক্ষতি হবে না।