প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দেশের ভালোর জন্য সরকারের ভালো কাজগুলো ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা মানসিক ব্যাধি আছে আমাদের দেশে। অনেকে মনে করে সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন না করলে গণমাধ্যম চলবে না। এই মানসিক ব্যাধি থেকে আমাদের বের হতে হবে। দেশের জন্য যদি ভালো কাজ করে থাকি, সেটা যেন একটু ভালোভাবে প্রচার করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলে আসছে।

খুব কম গণমাধ্যমই আছে যারা সরকারের পজেটিভ বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ করে। নেগেটিভই বেশি। আমরা কারও কাছে দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না। এটুকু দাবি করতেই পারি, আমরা যদি ভালো কাজ করি সেটা যেন ভালো করে প্রচার করা হয়। আমার স্বার্থে না, দলের স্বার্থে না, দেশের স্বার্থে এটা করবেন।

জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। আমরা চাই, দেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে আসুক। সেটা ফিরে এসেছে। এটাই যেন কেউ আর বানচাল করতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে। আমাদের সরকারের সময় ছয় হাজারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। একটা নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে নাই। কারণ, আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করি নাই। করবোও না আমরা। জনগণের এটা অধিকার। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ তো কখনও হয়রানি করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,যারা এই দেশে কারফিউ দিয়েছে, তারা নির্বাচন সুষ্ঠু কিনা, তা নিয়ে কথা বলে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিএনপি জোর গলায় গণতন্ত্রের কথা বলে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলো কিনা সে বিষয়ে বক্তব্য দেয়। কিন্তু আমরা যদি প্রশ্ন করি, এই দেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ কারা করেছে? জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। তার হ্যাঁ/না ভোট, তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, অথবা সেই ৭৯ সালে সংসদ নির্বাচন। প্রত্যেকটা নির্বাচনে ভোট চুরির প্রক্রিয়াটা আছে। এই দেশে দুর্নীতি এবং ঋণ খেলাপি কালচার, এটাতো তারাই তৈরি করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই যারা অন্ধকার পথে ক্ষমতায় আসে, অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রেসিডেন্ট সায়েমকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে, তারা আবার গণতন্ত্র কীভাবে দেয়, সেটা আমি জানি না। এমনকি প্রতিদিন তো কারফিউ ছিল। তার মানে কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছে, জনগণতন্ত্র তারা দেয় নাই। এটাই হলো বাস্তবতা এবং গণতন্ত্রের ভাষাও তারা বোঝে না। যারা সব সময় জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের মুখে নির্বাচন, গণতন্ত্র আবার নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কথা শুনতে হয়। সুশীলসমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন,আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, যারা দলও গঠন করতে পারে না,নির্বাচনও করতে পারে না। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশটা তাদের আছে। যদি কোনও অবৈধপন্থায় কেউ ক্ষমতা দখল করে, অথবা ইমার্জেন্সি আসে, অথবা মিলিটারি রুলার ক্ষমতা নেয়, তখন তাদের গুরুত্বটা বাড়ে। তখন তারা নাকি একটা পতাকা পায়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য এই দেশের। এরা জ্ঞান-গুণী হয়েও এই ধরনের পাপ মন নিয়ে কাজ করে। এই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। গণতন্ত্র আছে বলেই তো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন,আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আজকে আকাশ জয় করেছি। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কত কথা এবং আরও অনেক কথাই তারা বলে। নিজেদের যদি মাথায় ঘিলু কিছু কম-টম থাকে তাহলে তো বলবেই। আমি নেভির জন্য সাবমেরিন কিনেছি। এই সাবমেরিন উদ্বোধন করে আসতে পারলাম না, বক্তৃতা শুনলাম যে, সাবমেরিন নাকি ফুটা, ফুটা পুরনোটা কিনেছি। ওটা নাকি পানির নিচে চলে গেছে। সাবমেরিন তো পানির নিচেই যাবে। সেই জন্যই তো আনা, সেই অভিযোগ আসলো। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে যেদিন স্প্যান উঠলো। সব পত্রিকা লিখলো পদ্মা সেতুর স্প্যান উঠেছে। সেই কথা শুনেই একজন বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন,জোড়া-তালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে, কেউ ওই সেতুতে উঠবেন না। আমি দেখবো ভবিষ্যতে এই সেতু হওয়ার পর তারা ওঠে কিনা। স্যাটেলাইট সম্পর্কে তো আরও কথা। কী যেন একটা আগুন জ্বালাইয়ে আকাশে উড়ে গেলো, আমরা কী পেলাম? এটা থেকে কী পাবে, সেই সাধারণ জ্ঞানটুকুও যাদের নাই, তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়নটা কীভাবে করবে, এটা আপনারাই বিবেচনা করেন। দেশবাসী বিবেচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই ফিরিয়ে এনেছি। এই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র আছে বলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চার লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। দুর্নীতির নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করেছিল। কিন্তু কেউ আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাচ্ছি। এই একটি ঘটনাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031