রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত ‘ফেনী-২’ আসনটি জেলার । একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন।
সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে জয়নাল আবেদীন হাজারী, বিএনপির অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে এ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন হাজারীর নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। তবে নিজাম উদ্দিন হাজারীকে কেন্দ্রীয়ভাবে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে বলে তার সমর্থকরা দাবি করছেন।
অপর দিকে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ অভিযানে সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন হাজারী ফেনী ছেড়ে পালিয়ে যায়। এর কয়েক বছর পর দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে দলের দায়িত্ব দেন। এ সময়ে ফেনী জেলাকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছি। যে কারণে গতবার আমাকে মনোনয়ন দেয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। এবারও তারই ধারাবাহিকতায় দলের মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। তবে কেন্দ্র থেকে দল যাকে মনোনয়ন দিবে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তার পক্ষে কাজ করে ওই প্রার্থীকে বিজয়ী করবে। এক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি মনে করেন।
হেভিওয়েট নেতারা ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আজিজ আহম্মেদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আক্রামুজ্জামান, ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আ.ক. ম সাহেদ রেজা শিমুলসহ একাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ফেনীতে অনেকটা নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে সময় পার করছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জর্জরিত দলটি একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাবেক জেলা সভাপতি প্রয়াত মোশাররফ হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের (ভিপি জয়নাল) নেতৃত্বাধীন একটি বলয় এবং সাবেক সভাপতি মেজর (অব.) প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানুর নেতৃত্বাধীন আরেকটি গ্রুপে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা। সাঈদ এস্কান্দারের অনুপস্থিতিতে তার সমর্থিত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টারের নেতৃত্বাধীন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে দলীয় কার্যক্রম। আর মোশাররফ-ভিপি জয়নাল অনুসারীরা বর্তমানে দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না থাকলেও ভিপি জয়নালের নেতৃত্বে একটা পক্ষ দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নতুন নেতৃত্ব ও নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তবে ফেনী-২ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল মনোনয়ন দৌড়ে শীর্ষে রয়েছেন। এছাড়া সাবেক মহিলা এমপি ও কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল সভাপতি রফিকুল আলম মজনুও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সম্পাদক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সভাপতি গাজি হাবিব উল্যাহ মানিকের নামও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উঠে এসেছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল) জানিয়েছেন, তিনি তিনবারের এমপি ছিলেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং তিনি শতভাগ মনোনয়ন পাবেন বলেও আশা করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অতীতের মতো তিনি এ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন।
এছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির ফেনী জেলা সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম, জামায়াতের সাবেক আমির লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রার্থী হিসেবে জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।