কদেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রসংক্রান্ত তুচ্ছ কারণে যুক্তরাজ্যে বসবাস এবং কাজের অধিকার হারানো বেশকিছু দক্ষ বাংলাদেশি পেশাজীবীর মামলা পর্যালোচনা করতে সম্মত হয়েছে । সম্প্রতি এ বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির তোপের মুখে পড়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন বিভাগের মন্ত্রী ক্যারোলিন নোকস।

ইতোপূর্বে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আয়কর প্রদানের নথিতে থাকা তুচ্ছ ও সংশোধনযোগ্য ভুলের অজুহাতে টায়ার ওয়ান ভিসাধারীদের যুক্তরাজ্যের স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়।
উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত কমিটির ওই শুনানিতে অভিবাসীসংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে দৃঢ় ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নোকস। ১৯৭০ সালের আগে যুক্তরাজ্যে যাওয়া ক্যারিবিয়ান অভিবাসীদের নাগরিকত্ব না দেয়ার সিদ্ধান্তটি ফাঁস হয়ে গেলে তা ‘উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডাল’ নামে পরিচিতি পায়। নোকসের ভাষ্য, ‘আমি চাই না দেশের জন্য অবদান রাখা উচ্চ দক্ষতার এসব মানুষ মনে করুক যে যুক্তরাজ্য তাদের কদর করে না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানসিকতার পরিবর্তন নিশ্চিত করাটা জরুরি। এটা নিছক আইনের দোহাই দিয়ে গৎবাঁধা উত্তর দেয়ার মানসিকতা লালনের বিষয় নয়।’

কমিটির প্রধান লেবার পার্টির এমপি উয়েভেট কুপার প্রশ্ন রেখেছেন, ‘সাধারণ যে ভুলগুলো আমরাও করতে পারি সেরকম ভুলের কারণ দেখিয়ে এইচএমআরসি টায়ার ওয়ান ভিসাপ্রাপ্তদের বাতিল হয়ে যাওয়া আবেদনগুলোর বিষয়ে তদন্ত করার আদেশ দিচ্ছেন না কেন মন্ত্রী, যাতে বোঝা যায় যে সেগুলোর মধ্যে কতগুলো আসলেই জালিয়াতি আর কতগুলো তুচ্ছ ভুলের অজুহাতে বাতিল করা হয়েছে?’ মন্ত্রী ক্যারোলিন নোকস প্রত্যুত্তরে কমিটিকে নিশ্চিত করেছেন, কোনগুলো জালিয়াতি আর কোনগুলো নিছকই ভুলের কারণে বাদ পড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যার ফিলিপ রুতনাম কমিটির কাছে জানিয়েছেন, বাতিল হওয়া ভিসা আবেদনগুলোর মধ্যে কতগুলো ধোঁকা দেয়ার কারণে বাদ হয়েছে আর কতগুলো আবেদনকারীদের ছাড় না দিয়ে বরং বেশি সন্দেহ করা অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের কারণে বাদ পড়েছে, তা খতিয়ে দেখতে তিনি কাজ করবেন।

চিকিৎসক, শিক্ষক, উদ্যোক্তাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত পেশাজীবীদের সবাই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার মতো ইউরোপীয় অঞ্চল বহির্ভূত দেশে থেকে টায়ার ওয়ান (জেনারেল) ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। তাদের সবার এখন নাগরিকত্বের (আইএলআর) আবেদন করতে পারার কথা, যেহেতু তারা আইনত বৈধভাবে অন্তত পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে ওই ধরনের ভিসা প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে তার আগেই যারা ওই ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন, তাদের জন্য গত এপ্রিল পর্যন্ত সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নাগরিকত্বের আবেদন করার সুযোগ উন্মুক্ত ছিল।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসব আবেদনের বেশিরভাগই বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আবেদনপত্র বাছাইয়ের কাজে থাকা যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আইনের ৩২২(৫) ধারার দোহাই দিয়ে এ কাজ করেছেন। আইনের ওই ধারায় আবেদনকারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভালো না খারাপ তা পর্যবেক্ষণের কথা বলা আছে। আয়কর সংক্রান্ত সামান্য ত্রুটির অজুহাতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে যাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে তাদের অনেকে ওই সিদ্ধান্তকে আইনিপন্থায় চ্যালেঞ্জ করেছেন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধি ৩২২(৫) আবেদন প্রত্যাখ্যানের প্রায় নিশ্চিত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও হোম অফিসের দাবি, দেশের অভিবাসী সংক্রান্ত বিধান ও কর ব্যবস্থার সুরক্ষায় ‘গভীর পর্যালোচনা’ প্রয়োজন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তথ্যের গড়মিলের বিষয়টি কি ধরনের তা যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আবেদনকারীর দেয়া ব্যাখ্যাও আমলে নেয়া হয়।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031