গাজীপুরে এখন নেই কোনো নির্বাচনী উত্তাপ। আর কদিন পর রোজা শুরু হবে। এরপর ঈদের ছুটি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থী ও ভোটাররা ধরেই নিয়েছেন ঈদের পর কোনো এক সময় ভোট নেয়া হবে।
আর রোজা ও ঈদ বিবেচনা করে আগামী জুনের শেষ দিকে ভোটের নতুন তারিখ ঠিক করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার ও আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম। আজ শুক্রবার নিজ নিজ এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই আহ্বান জানান তারা।
আপিল আদালতের রায়ে নির্বাচনী বাধা কাটলেও ঝিমিয়ে পড়া নির্বাচনী প্রচারণা এখনো গা ঝাড়া দেয়নি গাজীপুরে। নিরুত্তাপ পুরো নির্বাচনী এলাকা। কোথাও নেই মাইকিংয়ের গাড়ি, নেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ। ভোটের তারিখ কবে নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন, সেদিকে তাকিয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
দুই প্রধান দলের সূত্রে জানা গেছে, ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণায় আবার মাঠে নামবেন তারা।
মৌজাসংক্রান্ত জটিলতায় একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ মে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মাত্র ৯ দিন আগে তা স্থগিত করে। পরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশনের আপিল আবেদনে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ মে) ওই স্থগিতাদেশ খারিজ করে আপিল বিভাগ। আগামী ২৮ জুনের মধ্যে গাজীপুর সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশও দেয় আদালত।
ওই দিনই কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন জানান, উচ্চ আদালতের আদেশ পেয়ে নির্বাচনের নতুন তারিখ আগামী রবিবার বিকেলে ঘোষণা করবে কমিশন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার (১১ মে) ছুটির দিন প্রচার-প্রচারণাহীন অলস সময় কাটান মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পাড়া-মহল্লায় নেই নির্বাচনী প্রচারণার হাঁকডাক, প্রার্থী ও সমর্থকদের ভিড়। সকাল থেকে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী সময় কাটান তার নিজ বাসভবন ছয়দানায়। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নৌকা ও আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে এর সমাধান হয়েছে। কিন্তু মাঝখানের এ বাধায় আমার নিজের, কর্মীর ও নৌকার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
মামলার কারণে ইতোমধ্যে কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীরা অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘এ থেকে উত্তরণে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সামনে অনেক দিন পড়ে রয়েছে। আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশন আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনের জন্য একটি সুন্দর দিন ঠিক করবে। আমরা চাচ্ছি ঈদের পর ২৫-২৬ তারিখে নির্বাচনটা হলে সবাই এখানে ভোট দিতে পারবে।’
পরে টঙ্গীতে স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান জাহাঙ্গীর আলম। এরপর তিনি ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয সম্মেলনে যোগ দিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান।
অন্য প্রধান মেয়র প্রার্থী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর বাসা থেকে বের হয়ে ছোট দেওড়া এলাকায় একটি মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আগামী জুনের ২৬-২৭ তারিখ ভোটের তারিখ নির্ধারণের দাবি জানান।
হাসান সরকার বলেন, ‘গাজীপুর শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বহু শ্রমিক ও ভাসমান ভোটারের বসবাস। ঈদের ছুটিতে তারা গ্রামের বাড়িতে যান এবং ফিরতে কয়েক দিন লেগে যায়। এই বিপুলসংখ্যক ভোটার যেন নির্বাচনী উৎসবে অংশ নিতে পারেন সেজন্য ২৬-২৭ জুন ভোট হলে ভালো হয়।’
এর আগে তিনি জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর মহানগর লেবার পার্টির সভাপতি আহসান হাবীব ইমরোজ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল-মামুন, টঙ্গী সচেতন নাগরিক পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট সমাজসেবক ফাকরুল জামালসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে খুলনা সিটি নির্বাচনের সঙ্গে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল। যথারীতি ওই দিন খুলনায় ভোট নেয়া হবে।