‘কথায় কথায় দাবি চলবে না ছাত্রদের কিসে ভালো, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্র হিসেবে ভালোই জানেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ।’
কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি ‘বরদাশত’ করবেন না বলেও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রদের পাশাপাশি সেই সঙ্গে শিক্ষকদের ‘দলাদলির’ বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ছাত্রলীগকে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দেন।
পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, ৬৯ এর গণ আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন, এক এগারোর পর তাকে গ্রেপ্তারের পর মুক্তির আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
সেই সঙ্গে গত নয় বছরে শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখায় ছাত্রলীগের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তি বজায় থাকবে, শিক্ষার পরিবেশ থাকবে। এইটুকু দাবি করতে পারি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় আছে।’
‘ছাত্ররা পড়াশোনা করবে, তাদের পড়াশোনায় কিসে ভালো হবে না হবে সেটা আমরা জানি, কারণ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এসেছি।’
‘প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রথম কাজ হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণ করা। শিক্ষার ব্যাপারে নীতিমালা, কীভাবে কী করতে হবে না হবে, নিশ্চয় আমাদের বয়স হয়েছে, আমরা অনেক ভালো জানি। আর জানি বলেই আমরা সেই ভাবেই সময়োপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
‘কথায় কথায় দাবি করলে তো হবে না’এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা দেশের কল্যাণ কীভাবে করতে হয়, উন্নয়ন কীভাবে করতে হয়, শিক্ষার মান উন্নত করতে হয়, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করতে হয়, শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হয়, আমরা তা ভালো করেই জানি। আর বলেই আজকে দেশ উন্নত হচ্ছে।’
শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব নিয়ে সতর্কতা
ছাত্রদের পাশাপশি শিক্ষকদেরকেও সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘শিক্ষকরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লাগবে, তারা দ্বন্দ্ব করবে আর তার ফল ছাত্ররা ভোগ করবে, সেটাও আমি চাই না।’
‘শিক্ষকরা যদি শিক্ষকদের সাথে কোয়ারেল (ঝগড়া) করেন ছাত্ররা শিখবেটা কী? কারও যদি কিছু বলার থাকে বলবেন, আমরা তো দেখব।’
‘দিনে বোধ হয়, মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাই। বাকি সময়টা তো দেশের কাজেই ব্যয় করি। কেউ তো বলতে পারবে না, কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে আমরা সমাধান করি না। আমরা সমাধান করি। সমাধান আমরা করতে জানি। কিন্তু কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা কখনও আমরা বরদাশত করব না।’
তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেবেন না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আমাদের ছেলে মেয়েরা যেন শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করে, তার জন্য। এটা অপব্যবহার করার জন্য না।’
ছাত্রলীগকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকার নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই ধরনের অসামাজিক কোনো ধরনের কাজের সঙ্গে কেউ যেন সম্পৃক্ত না হয়। যদি কেউ ধরা পরে, সাথে সাথে তাকে যেমন এক্সপেল করা হবে, সেই সাথে তার বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
‘ভেন্ডালিজম চলবে না’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ভেন্ডালিজম (ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম) চলবে না বলেও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
‘ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করবে, এটা আমি বরদাশত করব না। কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদিও অটোনমি আছে, কিন্তু সমস্ত খরচ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়।’
‘প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আমি প্রচুর টাকা পয়সা খরচা করেছি। নতুন নতুন হোস্টেল থেকে শুরু করে নতুন নতুন সাবজেক্ট থেকে শুরু করে সব কিছু করে দেয়া হয়েছে। সেখানে যদি কেউ ভাঙচুর করে, বা কোনো রকম ভেন্ডালিজম করে, আমার কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নির্দেশ রয়েছে, সে যে দলের হোক, যেই হোক কাউকে ছাড়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নেব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনে আক্রমণে জড়িতদের দেখে নেয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তদন্ত চলছে, ইতিমধ্যে অনেকেই ধরা পড়েছে, আরও ধরা পড়বে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত আর লুটপাট যারাই করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমি যখাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি, সেটা নিতে হবে।’
ট্রাফিক আইন শিখতে হবে ছাত্রদের
রাস্তা ঘাটে কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে পার হতে হবে, সে সম্পর্কে প্রত্যেকটা ছাত্র ছাত্রীকে জানার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ দৌঁড় মারবে, আর গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হলে ড্রাইভারকে মারবে, সেটা তো হয় না।’
‘রাস্তায় চলতে হলে কীভাবে চলতে হয়, সেটা তাকে জানতে হবে, শিখতে হবে। বাসে করে যাওয়ার সময় বাসে হাত ঝুলিয়ে, মাথা ঝুলিয়ে বসে থাকবে, আর হাত গেলে সে দোষ বিআরটিসির হবে, সে দোষ ড্রাইভারের হবে, তা তো না। প্রত্যেকটা জিনিস ব্যবহারের নিয়মকানুনটা মানতে হবে সবাইকে।’
‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত, এ জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু তার মানে এই না, যে মা বাচ্চার হাত ধরে চলন্ত গাড়ির সামনে দৌড় মারবে। এটা কেমন ধরনের কথা।’
‘পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।’
রাস্তায় চলতে চলতে এখানে সেখানে কাগজ বা পানির বোতল ফেলার প্রবণতার কথা উল্লেখ করেও জনসচেতনতার অভাবের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন,‘ কেন এই ইনডিসিপ্লিন?’
‘যে যেখানে থাকেন, হোস্টেলে থাকেন, বাড়িতে থাকেন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকতে হবে। কারণ আপনার ফেলে দেয়া জিনিস আরেকজনের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, সেটা মনে রাখতে হবে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ এটা প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব। যে দায়িত্বটা সকলকে পালন করতে হবে।’