বিক্রি হচ্ছে বরফ দেওয়া ফলের শরবত। গরমের এই সময়ে জনসমাগমপূর্ণ কোনও এলাকায় গেলে চোখে পড়বে রাস্তার ধারে ভাসমান দোকানিরা আনারস ও তরমুজ কেটে সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছেন। রসালো আনারস বা লাল তরমুজ গরমে-যানজটে ক্লান্ত নগরবাসীর জিভে জল আনার জন্য যথেষ্ট!
সাধারণত পথ চলতি মানুষজনই, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন এসব খাবার খান। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অস্বাস্থ্যকরভাবে বিক্রি হওয়া এসব খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
মৌসুমি ফলের মধ্যে আনারস এবং তরমুজ বন্দরনগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় কেটে পিস করে বিক্রি করা হয়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি এসব ফল ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে নোংরা পানি। কেটে রাখা ফলের ওপর উড়ে উড়ে বসছে মাছি, পড়ছে ধুলাবালি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার ধারের এইসব ফল, খাবার, শরবত বিভিন্ন অসুখ, বিশেষ ডায়রিয়ার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট লুবাবা শাহরিন বলেন, ‘রাস্তার ধারের খাবার খুবই অনিরাপদ। এই যে ফল বিক্রি হচ্ছে এগুলো পরিষ্কারে কী পানি ব্যবহার হচ্ছে, আমরা জানি না। আবার একটি মাছি ড্রেনের পানিতে বসছে, সেখান থেকে উড়ে এসে এসব খাবারের ওপরেও বসছে। আমরা না বুঝেই অনায়াসে খেয়ে যাচ্ছি। যে কারণে বাড়ছে ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। আমাদের এখানে প্রতিদিনই প্রচুর রোগী আসছে। তাদের যে কয়জনের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন সবাই বাইরের খাবার কিছু না কিছু খেয়েছেন। ভ্যানগাড়ি থেকে ফল, দোকান থেকে পানি কিংবা রাস্তার ধারের শরবত খাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
গরমের সময় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় প্রতিবছরই। তাই শরীরে বাড়তি পানির চাহিদা মেটাতে রাস্তার ধারের ফল কিংবা শরবত খাওয়ার প্রতি বেশি ঝুঁকে সাধারণ মানুষ।
পল্টন এলাকার ফল বিক্রেতা ফজলুর মতে, অল্প টাকায় তৃষ্ণা মেটানো যায় বলেই এসব খাবারের চাহিদা বেশি। তিনি বলেন, ‘আস্ত তরমুজের ম্যালা দাম। ভাইঙ্গা বেচলে লাভও হয়, মানুষও খায় বেশি। এক প্লেট বেচি ২০ টাকায়। আস্ত তরমুজ দিনে ২-৩টা বিক্রি হয়, কিন্তু কাইট্টা বেচলে ৭-৮টা বেচন যায়।
খাদ্যকে সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ করতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। প্রাকৃতিক কৃষি নিয়ে কাজ করেন দেলওয়ার জাহান। তার মতে, উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং পরে সংরক্ষণক্ষেত্রে খাদ্য দূষিত হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে এই দু’টি জায়গায় কাজ করা জরুরি। তাহলেই খাদ্যকে নিরাপদ করা সম্ভব। দেলওয়ার জাহান প্রাকৃতিক কৃষিজাত পণ্যের সঙ্গে বাজারের পণ্যের তুলনা করে বলেন, ‘বাজারের পণ্য উৎপাদনের সময় হরমোনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দেওয়ায় বিভিন্ন ধরনের দূষণ হয়। আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, তাতে রাসায়নিক বা হরমোনের নামে বিষ দেওয়া হয় না।’
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনবলের অভাবে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে গেছে স্বীকার করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য এবং যুগ্ম সচিব মাহবুব কবির বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় গিয়ে ধরার মতো জনবল নেই আমাদের। তবে আমরা যেটা করছি বড়গুলো থেকে শুরু করেছি। ধীরে ধীরে ছোটদের কাছে যাব। খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি।’