পুলিশের সেবাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর এবং কার্যক্রমের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন থানা এলাকায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। যা বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেই (ডিএমপি) রয়েছে।
এ কার্যক্রমের ফলে পুলিশের ডিসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের জবাবদিহিতা আরো বাড়বে। একই সঙ্গে অপরাধ দমনের পাশাপাশি অপরাধীদের যাবতীয় তথ্যও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতের নাগালে থাকবে। এ কাজে সফল অফিসারদের পুরস্কারের পাশাপাশি তিরস্কারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সিএমপির সম্মেলন কক্ষে মাসিক অপরাধ বিষয়ক সভায় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। সিএমপির দায়িত্ব নেয়ার পর এটি তার প্রথম মাসিক অপরাধ সভা।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, প্রথম সভাতেই সিএমপির সার্বিক কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেন ইকবাল বাহার। পুলিশের সেবাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর এবং কার্যক্রমের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য সিএমপি বিভিন্ন থানা এলাকায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। খুব শিগগিরই এই কার্যক্রম শুরু করতে প্রত্যেক জোনের ডিসিদের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন কমিশনার।
সভায় জানানো হয়, প্রতিটি থানার একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু নির্দিষ্টসংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যরা স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই ধারণাটি এসেছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যপদ্ধতি থেকে। সিএমপি পুলিশের সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতিটি থানা এলাকায় ৫ থেকে ২০টি বিটে ভাগ করা হবে অপরাধ ও জনসংখ্যার অনুপাতে। বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ফলে পুলিশের প্রতিটি এলাকা, এলাকার অপরাধ প্রকৃতি এবং অপরাধী সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি পাবে। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বসবাসকারীদের কৌশলগত অবস্থান এবং এলাকাবাসী সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।
এতে করে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট অপরাধী শনাক্ত করা সহজতর হবে এবং অপরাধ দমন ও উদ্ঘাটনে পুলিশের রেসপন্স টাইম কমে আসবে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশিং কার্যক্রম বেগবান হবে, জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধ প্রতিরোধে জনগণের সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়াও গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক অপরাধগুলো হ্রাস পাবে। বিটে থানার জনসংখ্যার আনুপাতিক সংখ্যা, বিটের অপরাধের মাত্রা, ধরন, থানার জনবলের সংখ্যা, টহলের জন্য সুবিধাজনক পরিধির ওপর ভিত্তি করে বিট সৃষ্টি করা হবে। প্রতিটি বিটে একজন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার বিট ইনচার্জ হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। তার সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ সদস্য কর্মরত থাকবে।
বিটপ্রধানরা মাদক বিক্রেতাসহ অপরাধীদের সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবেন। তারা চিহ্নিত অপরাধী, ছিনতাইকারী, অবৈধ অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার, পরোয়ানা তামিল, বখাটে ও নারী উত্ত্যক্তকারীদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেবেন। এর বাইরেও বিটপ্রধানরা তৈরি পোশাক কারখানা, ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
এলাকার লোকদের নিয়ে তারা প্রতি সপ্তাহে সাধারণ সভা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। বিট সদস্যরা রাজনৈতিক ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি করবেন।
এছাড়া বিভিন্ন অপরাধী ও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বাড়ির মালিকের অজ্ঞাতে ভুয়া নাম-ঠিকানা ও প্রমাণ ব্যবহার করছে; কিংবা নাম-ঠিকানা অপ্রকাশিত রেখে এবং কোনো চুক্তি না করেই বাড়ি ভাড়া নিচ্ছে কিনা সে বিষয়টিও মনটরিং করবে বিট পুলিশ। এতে জঙ্গিরা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ পাবে না।
অপরাধ সভায় সিএমপিতে এতোদিন ভালো কাজের জন্য যে পদ্ধতিতে পুরস্কৃত করা হতো, এখন সেই প্রথা ভেঙে আরো ব্যাপক আকারে করা হবে। ভালো কাজের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে ব্যক্তিগত পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে কনস্টেবল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সহকারী পুলিশ কমিনার পর্যন্ত ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে কাজের মূল্যয়ান করা হবে। সেই কাজের ভিত্তিতে পুরস্কৃতের পাশাপাশি ব্যর্থতার জন্য তিরস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া মনিটরিং অফিসার হিসেবে প্রত্যেক জোনের ডিসিদেরও ওই জোনের সফলতা ও ব্যর্থতার দায় নেয়ার ব্যবস্থা হরা হয়েছে। তাদেরকেও জোন ভিত্তিক সেরা জোনের ডিসি হিসেবে পুরস্কার দেয়া হবে।
এছাড়া জনবান্ধব পুলিশ ও সেবার মূল কেন্দ্র থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সৎ ও কর্মঠ পুলিশ অফিসার ছাড়া ব্যর্থ পুলিশ অফিসারের স্থান সিএমপিতে হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন নতুন কমিশনার ইকবাল বাহার।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে দুটি করে আটটি টিমে ভাগ হয়ে থানা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে ডিবি।
সভায় সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টচার্য্য, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মাইনুল হাসান ও অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ উল হাসানসহ সকল জোনের ডিসি, এডিসি, এসি, ওসিরা উপস্থিত ছিলেন।