তরুণীর ডাক নাম জুঁই। পুরো নাম জেসমিন আক্তার জুঁই। পুলিশের খাতায় সে একজন ‘জেন্টস কিলার’। তবে গুলিতে নয়। মন দেয়া-নেয়ার নামে প্রেমপাগল ছেলেদের বশ করে সর্বস্ব লুটে নেয় এ তরুণী। বিবাহিত। স্বামীর সঙ্গে এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে তার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তোলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে জুঁই। তবে কেবল সে একা নয়, তার সঙ্গে স্বামী ছাড়াও আছে ৩ সদস্য মিলে ৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে জোর করে টাকা আদায় করে জুঁই ও তার সহযোগিরা। সর্বশেষ ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে মেয়েটি।
সরজমিনে গতকাল সকাল ১১টায় বায়েজীদ থানায় গিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে বেরিয়ে আসে অপহরণ চক্র ও আপত্তিকর ছবি তোলার চক্রের নানা অজানা কাহিনী। যে ঘটনায় তাদের এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা ধরা পড়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। নির্মাণ কাজের মালামাল সরবরাহকারী ব্যবসায়ী সোহেল। ভুয়া তথ্য দিয়ে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এই দলের ৩ সদস্য মহিম আজম চৌধুরী, অনন্য বড়ুয়া রনি ও সুমন গাজী।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৩ই এপ্রিল ব্যবসায়ী সোহেলকে তারা দুটো সিএনজিযোগে কৌশলে শহরের রুবি গেইট থেকে তুলে জিইসি মোড়ের একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়িতে নিয়ে যান। এ সময় অপহরণকারীরা সোহেলকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তরুণী জুঁই তার শরীরের কাপড় চোপড় খুলে ব্যবসায়ী সোহেলের সঙ্গে জড়িয়ে ছবি তুলেন। এ সময় তারা সোহেলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করলে তিনি ১৯ হাজার টাকা পকেট থেকে বের করে দেন। এতে জুঁই ও তার সহযোগীরা শান্ত না হলে সোহেল তার এক চাচাকে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য বলেন। পরে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বলে প্রাণে বেঁচে যায় সে। ওই সময় অপহরণকারীরা রাত একটার দিকে তাকে বন্দিদশা থেকে ছেড়ে দেয়।
বায়েজীদ থানা পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে জুঁই ও তার সহযোগিরা জানিয়েছে এ ধরনের অপকর্ম করে তারা চট্টগ্রাম শহরে জীবিকা নির্বাহ করছে। একজন ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে নোংরা ছবি তোলার জন্য জুঁই ও তার স্বামী পান ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা অন্যরা ভাগবাটোয়ারা করেন। এর আগেও একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার আপত্তিকর ছবির ফুটেজ গোপনে রেখে দিয়েছেন। যারা এ ঘটনা থেকে বাঁচতে চান কিংবা সামাজিক মর্যাদার ভয়ে তাদের এড়িয়ে চলেন কিছুদিন পর পরই গিয়ে জুঁই সেখানে হাজির হন।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, মেয়ে দিয়ে মানুষকে জিম্মি করে এ চক্রের সদস্যরা। অনেক মানুষ বিবস্ত্র হওয়ার ঘটনা চেপে যাওয়ায় লজ্জায় মুখ খুলে না। তিনি আরও বলেন, সোহেলের মতো আরও কতজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে এ ধরনের নোংরা কাজ হয়েছে তা জিজ্ঞাসাবাদ করলে আশা করছি বেরিয়ে আসবে।