প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযানের তাগাদা দিয়েছেন তিনি।
র্যাবের ১৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পুলিশের এই বিশেষায়িত বাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয়, যেখানে দেশের সব কটি বাহিনীর সদস্যদেরকেই সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী র্যাবের নানা ভূমিকার প্রশংসা করেন। বলেন, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে আরও সহানুভূতির সঙ্গে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রাথমিক স্বীকৃতিপত্র অর্জন এবং উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সে জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন করতে হবে।’
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে হলে মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ হলেই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকতে পারে, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশকে উন্নত করার পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেন বা জনগণের শান্তি নিরাপত্তা বিধান করেন। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান, জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে কাজ করবেন।’
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিরোধ গড়তে হবে, ন্যায় ও সত্যকে সব সময় গুরুত্ব দিতে হবে।
চোরাকারবার, খাদ্যে ভেজাল, জাল মুদ্রা, পাসপোর্ট করা-নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ ঠেকাতে যা যা করণীয় তা করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যারা এসবে জড়িত, সে যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
পণ্য নকল বা খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নকল কেন করতে হবে বা খাদ্যে ভেজাল দিতে হবে? এখন তো খাদ্যের অভাব নাই। বাংলাদেশ খাদ্যে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
‘আমরা ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি ১১ লক্ষ যে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা আমরা করতে পারছি।’
‘এখানে ভেজাল খাবার দেয়া বা নকল জিনিস তৈরি করার বিরুদ্ধে যে অভিযান আছে, সেটা অব্যাহত রাখতে হবে।’
ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে
জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এই তৎপরতার বিরুদ্ধে অভিযানের কথাও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই একটা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়।…আমি স্পষ্টভাবে একটা কথা বলতে চাই, যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্মও নাই, তাদের কোনো দেশও নাই, তাদের কোনো জাতিও নাই, কিছুই নাই। তারা জঙ্গি, তারা সন্ত্রাসী, তারা সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু।’
‘এই পথটা সম্পূর্ণ ভুল পথ। এই ভুল পথে আমাদের ছেলে মেয়েরা যেন না যায়, সে জন্য যে উদ্যোগগুলো আমি গ্রহণ করেছি।’
জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সে সময় অনেকেই ভেবেছিল এই সমস্যাটা বাংলাদেশ এককভাবে সমাধান করতে পারবে না।’
‘বাংলাদেশকে কখনও কেউ যেন জঙ্গির দেশ, সন্ত্রাসীর দেশ এভাবে অপপ্রচার না দিতে পারে। আর বাংলাদেশের মানুষ যেন শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে, যাতে করে আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করতে পারি।’
আশুলিয়া, মিরপুর, দারুস সালাম, তেজগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল, ঝিনাইদহ, সিলেটের আতিয়া মহলসহ বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি উত্থান এবং তাদের প্রতিরোধের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সেখানে র্যাব বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।’
‘আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত। অনেকেই ভাবে আমরা কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করেছি, জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানটা অব্যাহত রেখেছি।’
মাদকবিরোধী অভিযানের নির্দেশ
মাসকাশক্তিকেও জঙ্গিবাদের মতোই ক্ষতিকর মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এর বিরুদ্ধেও কঠোর অভিযানের নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, ‘এই বিষয়েও সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত দরকার। কেবল শহরভিত্তিক না, গ্রাম পর্যায়েও এটা করতে হবে।’
‘মাদক এমনভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে যে আমাদের একেকটা পরিবার.. কোনো পরিবারে যদি মাদকাসক্ত সন্তান থাকে, তাহলে সে পরিবারের কাছে এর থেকে বড় দুঃখের কিন্তু আর কিছু হতে পারে না। কাজেই এর থেকে যেন আমাদের ছেলে মেয়েরা দূরে থাকে, তার ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে নিতে হবে।’
‘আমি র্যাবকে অনুরোধ করব বলব, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেভাবে আমরা সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, মাদকের বিরুদ্ধেও এভাবে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।’
‘সেখানে মাদক কারা তৈরি করে, কারা বিক্রি করে, কারা পরিবহন করে এবং কারা সেবন করে, সকলেই সমানভাবে দোষী, এটাই মাথায় রাখতে হবে এবং সেভাবেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
‘ইতিমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে র্যাব সাফল্য অর্জন করেছে। সে জন্য তাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং আমি চাই এটা অব্যাহত থাকুক।’
র্যাবের প্রশংসা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি সুন্দরবনে জলদস্যুবিরোধী অভিযানের সাফল্যের জন্যও র্যাবের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা মানুষদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়ারও নিশ্চয়তা দেন তিনি।
প্রশ্ন ফাঁস রোধে মন্ত্রণালয়ও, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি র্যাবের চেষ্টারও প্রসংশা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘র্যাবের উপস্থিতিটাই কিন্তু তাদের কাছে একটা ম্যাসেজ চলে যায়। তাদের অনেকে ধরাও পড়েছে।’
র্যাবের আধুনিকায়নে উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘র্যাবকে একটি অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইতিমধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা বাজেটও দিয়েছি।’
র্যাবের নতুন তিনটি ব্যাটালিয়ান তৈরির ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ভালোই হলো বাজেটের আগে আগে বললে ভালো হলো, আমরা বাজেটের প্রিপারেশন শুরু করেছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উল্টোপাশে র্যাবের সদরদপ্তর কমপ্লেক্স এবং শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ প্রেরণা ধারা উদ্বোধন করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারি, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।