মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, লাশের পর লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারদিক ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। উপকূলে আঘাত হেনেছিল । বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পরদিন বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে গিয়েছিল সে ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিবেক। সহায়–সম্বল ও স্বজনহারা উপকূলের কিছু মানুষ পেয়েছিল নবজন্ম। কেমন আছেন তারা? দুর্যোগ মোকাবিলার কি অবস্থা এখন উপকূলের? আজ আবারো এসে গেছে সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ২৮ বছর আগের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে বিলিন হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম–কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। চলছে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এপ্রিল, মে মাসে একাধিক নিম্নচাপের আশংকার কথা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ অরক্ষিত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার উপকূল। বাংলাদেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের বন্দর নগরীর পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপকূলীয় এলাকার লোকজন এখনো রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আতংকে। ৯১ সালের এ ভয়াল রাতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের এসব এলাকায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও এখনো পর্যন্ত সেখানে নির্মিত হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। অতীতে লক্ষ্য করা গেছে বাঁধ নির্মাণ ঘোর বর্ষাকালে জোয়ারের পানি ঠেকানোর নামে রিংবাঁধ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কার ইত্যাদি নানা নামে প্রতি বছরই নেয়া হয় বিভিন্ন প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্পে ঘটে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ নয় ছয় এর ঘটনা। কিন্তু উপকূলবাসীর মা–বোনদের জীবনের ভাগ্য নিয়ে চলে নানান খেলা। লুটেরাদের পেটে চলে যায় বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ। বর্ষা আসলে ভেঙে যায় বাঁধ। আবারো নতুন নতুন প্রকল্পের নামে নতুন বরাদ্দ। এভাবে বছরের পর বছর উপকূলীয় বাঁধের সংস্কারের নামে চলে আসছে সরকারি অর্থের অপচয়। জাতীয় রাজস্বের ৮০ ভাগ অর্থ যোগানদানকারী দেশের অর্থনীতিতে হৃদপিণ্ড হিসেবে কাজ করলেও এবং বিশ্বের ৭৬তম বড় বন্দর হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে পরিচিত বন্দর নগরীর পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এখন পর্যন্ত টেকসইভাবে সংস্কার না হওয়া দুঃখজনক। এখনো বাঁধের বিভিন্ন অংশ রয়েছে ভাঙা অবস্থায়। ৯১ সালের জলোচ্ছ্বাসে ও ঘূর্ণিঝড়ে এ বাঁধটি ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও শিল্প কারখানা ও স্থাপনার। অনুরূপভাবে জন্মস্থান বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকার ভয়াবহ বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ বর্ষার পূর্বে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও অদ্যাবধি কোনো কোনো ইতিবাচক খবর কর্তৃপক্ষ হতে আসেনি বলে এলাকাবাসী খুবই উদ্বিগ্ন এবং মহা আতংকে দিন কাটাচ্ছে।
উপকূলবাসীদের বক্তব্য শুষ্ক মৌসুমে কাজ শেষ না হলে আসন্ন বর্ষায় আবারো অনেক উপকূলবাসী পানির নিচে থাকতে বাধ্য হবে। তাই অসম্পূর্ণ কাজ বর্ষার পূর্বেই দ্রুত সুসম্পন্ন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বর্তমান সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ সমীপে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।