বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ বাড়ছে বেসরকারি খাতে। আর এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ব্যাপক চাপ ফেলছে বলে তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে‘প্রাইভেট কমার্শিয়াল বোরোয়িং ফ্রম ফরেন সোর্সেস ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যানাটমি’শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে ৪০০ কোটি ডলার বেসরকারি খাতে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ ছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে প্রায় এক হাজার ১৫০ কোটি ডলার হয়েছে। বিদেশী এ ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ শতাংশ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণের ১১ ধরনের উদ্বিগ্নতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ফরেন কারেন্সি রিস্ক, মোরাল হ্যাজার্ড, কস্ট অব বোরোয়িং, ফরেন কারেন্সি বোরোয়িং লোকাল বিজনেস অর্গানাইজেশন, লোন ইউটিলাইজেশন, পলিসি আনসার্টিইনিটি, পলিসি সাপোর্ট, ভেরিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন, বোরোয়িং ফ্রম অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং ঋণ অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতা।
এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৪ শতাংশ বিদেশি ঋণ পোশাক খাতে। এরপর বিদ্যুতে ২১ শতাংশ, সুয়েটারে ১৬ শতাংশ, ডায়িং ও নীট গার্মেন্টসে ১২ শতাংশ, টেক্সটাইলে ১১ শতাংশ, প্ল্যাস্টিকসে ৫ শতাংশ, সেবায় ৩ শতাংশ এবং ওষুধে ২ শতাংশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ব্যবসায়ী বিশেষ করে রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে প্রথম দিকে এ ঋণের কিছু অপব্যবহার হয়েছিল। এখন পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোরভাবে নজরদারি করছে।
বেসরকারি খাতে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন ডেপুটি গভর্নর। তিনি জানান, বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও বিষয়টি সর্তকতার সঙ্গে দেখতে হবে।
বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ যেন ভিন্ন খাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করলে তারল্য সংকট থাকবে না। তবে এজন্য সরকারি বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করা জরুরী। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিলে ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিডার নির্বাহী কমিটির সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডল বলেন, ২০০৯ সালের দিকে ব্যাংকে উচ্চ সুদের কারণে একটি সংকট সৃষ্টি হয়। ব্যাংক ঋণ নিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে অনেক বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে।
আরও কয়েকটি কারণে সরকার বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেয় জানিয়ে ডেপুটি গবর্নর বলেন, ‘কিন্তু ঋণ গ্রহীতাদের ঋণের অর্থ সঠিক বিনিয়োগ করতে হবে।’
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কোনো সংস্থার এক টাকাও খেলাপি নয়। অথচ ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের অর্থ ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এটা মানা যায় না। কেন এটা হচ্ছে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত কয়েক বছরে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে জানিয়ে এসএ চৌধুরী বলেন, ‘আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। ’
বিদেশী ঋণ অর্থনীতির জন্য যাতে চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে সরকারের সৃষ্টি রাখার তাগিদ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বিদেশি ঋণের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে নজরদারি করার তাগিদ দিয়ে বলেন, এটি না করতে পারলে ঝুঁকির মুখে পড়বে অর্থনীতি।