চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এক ব্যবসায়ীকে মারধরের ভিডিও প্রকাশের পর সংগঠন থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ।
বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর তিনি হাতে লেখা এই চিঠি পাঠান, যেটি সিটিজি টাইমস ডটকমের হাতেও এসেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পিতা মুজিবুরের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম।
একান্ত ব্যক্তিগত কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এমতাবস্থায় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আবেদন করছি।’
রনি তার অব্যাহতিপত্রে আরও লেখেন, ‘প্রাণের ছাত্রলীগ ভালো থেকো। স্বকীয়তা নিয়ে লড়াই করার সৎ সাহস রেখ।’এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত জানতে ফোন করলে সভাপতি-সম্পাদককে পাওয়া যায়নি।
তবে দফতর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা বলেন, ‘আমি এখনও রনির চিঠি হাতে পাইনি। সভাপতি-সম্পাদককে অনলাইনে দিয়েছেন কিনা জানার চেষ্টা করছি।’
চট্টগ্রামের এক কোচিং মালিককে থাপ্পড় দিলেন রনি
অধ্যক্ষকে পেটানোর পর আবারও থাপ্পড় দেয়ার দৃশ্যের মাধ্যমে ভাইরাল হলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। চট্টগ্রামের এক কোচিং মালিককে মনের জ্বালা মেটাতে আচ্ছা করে থাপ্পড় মারতে দেখা গেছে মহানগর ছাত্রলীগের এই নেতাকে।
অধ্যক্ষকে পেটানোর কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই প্রকাশ পেল চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির আরেক কেলেঙ্কারি। এবার তিনি পিটিয়েছেন চট্টগ্রামের এক কোচিং ব্যবসায়ীকে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানিয়ে কোচিং মালিক রাশেদ মিয়া পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ঘটনারও সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিস কক্ষের প্রায় ৬ মিনিটের এই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে আঙুল তুলে শাসিয়ে টেবিল চাপরাচ্ছেন রনি। এক পর্যায়ে রাশেদের গালে থাপ্পড় মারতে দেখা যায় রনিকে। পরে চুল ধরে টানা-হেঁচড়া করে রাশেদের গালে কয়েকবার থাপ্পড় মারেন তিনি।
মাঝে মধ্যে চলতে থাকে তার ‘শাসন’। এভাবে প্রায় আড়াই মিনিট চলার পর রুম ছেড়ে বেরিয়ে যান রনি। কয়েক মুহূর্ত পরই আবারো ফিরে এসে গালমন্দ করতে থাকেন। এই মুহূর্তে তাকে দীর্ঘ সময় কারো সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
পুরো ঘটনায় কোচিং মালিক রাশেদকে হাতজোড় করে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় রনি দাবি করতেন ইউনিএইড কোচিং সেন্টারে তারও মালিকানা আছে।
এর আগে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছিল এই নেতার বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে তিনি অভিযোগ উঠেছিল।
অধ্যক্ষ বলেছিলেন, ‘কলেজে এসে তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে। পরে চকবাজার এলাকায় তারা ভাঙচুর করলে টিনুর অনুসারীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’
বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি বলেছিলেন, ‘উন্নয়ন ফি নামে বিজ্ঞান কলেজ কর্তৃপক্ষ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করছিল। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলতে আমি বিজ্ঞান কলেজে গিয়েছিলাম। এই সময় কাউকে লাঞ্ছিত করা হয়নি।’
স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায়কে কেন্দ্র করে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এবং চকবাজার এলাকার স্থানীয় যুবলীগ কর্মী নুর মোস্তফা টিনুর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি ফেরত দেওয়ার বিষয় নিয়ে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। চকবাজার এলাকায় রনির লোকজন এসে অবস্থান নিয়েছেন জানতে পেরে এই সময় যুবলীগ নেতা নূর মোস্তফা টিনুর সমর্থক ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে যান। এই সময় উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে ধাওয়া -পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।