এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার বিমানবন্দরে উড্ডয়ন–অবতরণ ছাড়াও উড়ে যাওয়া প্রতিটি উড়োজাহাজের বৈমানিকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন । তাদের নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করেই উড়োজাহাজের গতিপথ, উচ্চতা মেনে চলেন বৈমানিকেরা। আকাশপথে নিরাপদ চলাচলের অনেকখানিই নির্ভর করে এসব বিষয়ে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারের সঠিক নির্দেশনার ওপর। বৈমানিকের মতোই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থতাও তাই জরুরি। এ কারণে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের নিয়মিত বিরতি দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যদিও লোকবল সংকটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। দেশের প্রধান বিমানবন্দরটিতে ৫০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের প্রয়োজন হলেও কর্মরত আছেন ১৭–১৮ জন। পত্রিকান্তরে অতি সম্প্রতি এসব তথ্য প্রকাশিত হয়। খবরের বিবরণে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা ডিউটি করতে পারবেন। এর পরই তাঁকে বিরতি নিতে হবে। পাশের দেশ ভারতের কলকাতা বিমান বন্দরেও এ নির্দেশনা মানা হয়। বাংলাদেশে লোকবল সংকটের কারণে এ নির্দেশনা মানা যাচ্ছে না। দিনের বেলা একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে টানা ৬ ঘন্টা, দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আর রাতের বেলা সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ১২ ঘন্টা। এক্ষেত্রে তাঁরা কোনো বিরতির সুযোগ পান না।
সুদক্ষ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা যে কোনো সুষ্ঠু বিমান পরিসেবার অপরিহার্য অংশ। এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারেরা। বিমান বন্দরে উড়োজাহাজ কোন পথে অবতরণ করবে, রানওয়ে খালি না থাকলে উড়োজাহাজগুলো কোন পথে, কত উচ্চতায় হোল্ডে থাকবে এবং উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করবে কিনা বৈমানিক সে সম্পর্কিত নির্দেশনা পান এয়ার কন্ট্রোলারের কাছ থেকে। আবার আকাশে থাকা অবস্থায় আবহাওয়াজনিত কারণে উড়োজাহাজের গতিপথ পরিবর্তন করতে হলেও তাদের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকেন বৈমানিকরা। এসব কারণে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে প্রতি মুহূর্তে কথা বলতে হয় বৈমানিকদের সঙ্গে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের ভুল হলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। বস্তুত আকাশপথে উড়োজাহাজের নিরাপদ চলাচলের অনেকটাই নির্ভর করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঠিক নির্দেশনার ওপর। বৈমানিকের মতো তাই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারেরও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা জরুরি। এজন্য তাদের দরকার নিয়মিত বিরতি ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের। কিন্তু বেদনার বিষয় হলো জনবল সংকটে এ সুযোগ পাচ্ছেন না দেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলালেরা। যেখানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ৫০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার দরকার, সেখানে কর্মরত মাত্র ১৭–১৮ জন। ফলে চাপ নিয়ে টানা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বিদ্যমান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের। এভাবে চললে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। সম্প্রতি নেপালে ঘটা বিমান দুর্ঘটনা এক্ষেত্রে আমাদের জন্য বড় শিক্ষা। সেখানে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগের ৪ মিনিটে এটিসি ও বৈমানিকের মধ্যে দ্বিধান্বিত কথোপকথন থেকেই বোঝা যায়, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র অবহেলাও কাম্য নয়। ইন্টারন্যশানাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী, একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার টানা দায়িত্ব পালন করবেন সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা।
এরপর তাকে বিরতি দিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কোলকাতা বিমানবন্দরেও এ নির্দেশনা মানা হয়। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে আমাদের দেশে তার ব্যতিক্রম ঘটছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে দিনের বেলায় একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে টানা ৬ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। রাতের বেলা তা বেড়ে হচ্ছে টানা ১২ ঘণ্টা। এক্ষেত্রে কোনো বিরতির সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁরা। এমন লোকবল সংকটের কারণে রোস্টার করে সরকারি ছুটিগুলোও ভোগ করতে পারছেন না তাঁরা। এজন্য কোন বিশেষ ভাতারও ব্যবস্থা নেই। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক।
লক্ষনীয়, বর্তমানে দেশের আকাশপথে উড্ডয়ন ও অবতরণজনিত ফ্লাইট বাড়ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি উড়োজাহাজের বৈমানিকের সঙ্গেই রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন এয়ার কন্ট্রোলারেরা। স্বভাবতই উড়োজাহাজের সার্বিক চলাচল বাড়ায় দায়িত্বের বাড়তি চাপ পড়ছে বিদ্যমান লোকের ওপর। এটি সুষ্ঠু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের পথে বড় বাধা। তাই, আমরা আশা করি, বিষয়টি মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।