তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভের অর্থচুরির ঘটনায় ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ (এফআরটিএমডি) ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের কর্মকর্তাদের মূল সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার কাজ করে এফআরটিএমডি। আর অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের ব্যাক অফিস সুইফট বার্তা প্রস্তুত ও পাঠানোর কাজ করে থাকে। রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় এ দু’ বিভাগের কার্যক্রম নজরদারিতে রেখেছে গোয়েন্দারা। এ অবস্থায় এফআরটিএমডির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী ছাইদুর রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘এক্সিকিউটিভ ফোরাম ফর পলিসি ম্যাকারস হাই অফিসিয়াল’ সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় যোগ দিতে তিনি আগামী ১৮ ও ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন।
তদন্ত সংস্থা সিআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু কর্মকর্তার পাসপোর্টে বিশেষ মার্ক করে রেখেছেন। তার মধ্যে এফআরটিএমডি শাখার জিএমসহ আরও অনেক কর্মকর্তা আছেন। এরপরও তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক।’ এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তার ধারণা, সন্দেহভাজন কর্মকর্তা কাজী ছাইদুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তার ফিরে আসা অনিশ্চিত। তাছাড়া তিনি কর্মশালা শেষে আত্মগোপনও করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ঘটনা। আর কারো ব্যাপারে সিআইডির আপত্তি থাকার অর্থ হল তিনি সন্দেহভাজন। এ ধরনের কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানো উচিত নয়। তিনি বলেন, যে কোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু কোনো কারণে ওই কর্মকর্তা যদি দেশে ফিরে না আসেন তবে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে। এতে পুরো কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি স্বচ্ছতার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ ধরনের অনুমতি প্রত্যাহার করা।’
ছাইদুর রহমান সম্পর্কে জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ি মাদারিপুর। তিনি অত্যন্ত চতুর বলে সহকর্মীদের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভিস রুল অনুসারে কোন বিভাগে একজন কর্মকর্তা ৩ বছর কর্মরত থাকতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিশেষায়িত কর্মকর্তা হলে অনধিক ৫ বছর পর্যন্ত একই বিভাগে কর্মরত থাকতে পারেন। কিন্তু ছাইদুর রহমানের ক্ষেত্রে সার্ভিস রুল মানা হচ্ছে না। তিনি একটানা ১৭ বছর ধরে একই বিভাগে কর্মরত। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ইতিপূর্বে এক সময়ে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলেন। পরে সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ পলিসি অনুযায়ী ৭ শতাংশ নগদ রাখা যেতো। সাঈদুর রহমানের প্রস্তাবে সেটা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি তার বিভাগের অপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাত্তা না দিয়ে সরাসরি ডিজি (ডেপুটি গভর্নর) ও গভর্নরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ থাকলেও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
কর্মশালার নামে যুক্তরাষ্ট্রে সফর ও দেশত্যাগের বিষয়ে কাজী ছাঈদুর রহমানের কাছে শনিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরং পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর বার বার চেষ্টা করা হলেও আর ফোনের কল রিসিভ করেননি। উল্লেখ্য, গত ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে। মোট ৫টি সুইফট বার্তার মাধ্যমে এসব অর্থ চুরি হয়েছে উল্লেখ করে ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুমের যুগ্ম-পরিচালক যোবায়ের বিন হুদা। মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। তারা কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের তথ্যও খতিয়ে দেখছে। – See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2016/04/09/123293#sthash.rhs5TbRW.dpuf