অপেক্ষাকৃত কম খরচে জ্বালানি পৌঁছানো যাচ্ছে নদী তীরবর্তী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে । স্বাভাবিকভাবেই এসব কেন্দ্র থেকে তুলনামূলক সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ কিনতে পারছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এ সুবিধা বিবেচনায় না নিয়েই অনেক সময় নদী থেকে দূরবর্তী স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা উপেক্ষা করে নদীর দূরবর্তী স্থানে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এ অনুমোদনকে অদক্ষতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এমনিতেই গ্যাস সংকটের কারণে নতুন অনুমোদিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সিংহভাগই ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের (এইচএফও) মতো উচ্চমূল্যের জ্বালানিনির্ভর। তার ওপর অনেকগুলোর অনুমোদন দেয়া হচ্ছে নদী থেকে অনেক দূরবর্তী স্থানে। জ্বালানি তেল সরবরাহে বাড়তি ব্যয়ের কারণে এসব কেন্দ্র থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে বিপিডিবিকে। অতিরিক্ত এ ব্যয়ের ভার নিতে হচ্ছে গ্রাহকদেরও। পত্রিকান্তরে সম্প্রতি এ খবর প্রকাশিত হয়। স্বল্প সময়ে বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে ব্যয়বহুল হলেও ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকার এ সংক্রান্ত দায়মুক্তি বিলও পাস করে। তারপরও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও কেনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। একই যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি ব্যবহার করে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়ে বিস্তর তারতম্য পরিলক্ষিত হতে থাকে। এমন অবস্থায় সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত উল্লিখিত খবরটি তাৎপর্যপূর্ণ। স্থান নির্বাচনে ভুল বিদ্যুৎ খাতের ক্ষতি বাড়াচ্ছে। এই ভুলের কারণে ব্যয় বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে নদী তীরবর্তী স্থানকে অগ্রাধিকার দিলে কম ব্যয়ে জ্বালানি ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ পৌঁছানো যেত। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসতো, ফলে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে তুলনামূলক সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ পেত বিপিডিবি। কিন্তু তা না হওয়ায় একই জ্বালানিভিত্তিক নদী দূরবর্তী কেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটিকে। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এমনিতেই উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হয়েছে। তার ওপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। জ্বালানি পরিবহনের বাড়তি ব্যয় শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদেরই বহন করতে হচ্ছে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনা না করেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অনেক ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। এটি একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে কর্তৃপক্ষের জন্য। উচ্চমূল্যে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চাইছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। স্থান নির্বাচনের ভুলের খেসারত জনগণ দেবে কেন? যেসব কোম্পানি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে বা পুরানো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে পরে কোন প্রশ্ন না ওঠে।
বিশ্বের প্রতিটি দেশই চায় যত স্বল্পমূল্যে সম্ভব জনগণকে বিদ্যুৎ যোগাতে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে বেসরকারি কোম্পানিগুলো কে কত বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে। সরকারও উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাদের অনুমতি দিচ্ছে এবং নিজেও অতিরিক্ত মূল্যে বিদ্যুৎ কিনছে তাদের কাছ থেকে। এর রহস্য কোথায় তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণ খুঁজে দেখলে দেখা যায়, নদী পথে জ্বালানি পরিবহন কম হওয়ায় নদী ও সমুদ্রের কাছে শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এখানকার শিল্পায়ন হয়েছে নদীকেন্দ্রিক। জ্বালানি ও কাঁচামাল পরিবহনে স্বল্প ব্যয়ের কারণে নদীর পার্শ্ববর্তী স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে উৎপাদন ব্যয়ও অনেক কম হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে এই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। আমাদের দেশেও তা-ই করা হয়েছে। কিন্তু কিছু বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নদী থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে। নদীপথের বিকল্প হিসেবে রেলপথ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের রেল যোগাযোগ অনুন্নত থাকায় এ ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ কম। এমন অবস্থায় আমরা চাই, ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনা হোক।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে আরো সতর্ক হতে হবে। কেবল মুনাফার কথা ভাবলে চলবে না। স্বল্প ব্যয়ে জনগণকে যাতে বিদ্যুৎ দেওয়া যায় তার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়িত করতে হবে। এটা করতে পারলে একদিকে যেমন সম্পদের অপচয় যেমন কমবে, তেমনি জনগণও স্বল্প মূল্যে বিদ্যুৎ সেবা পাবে। অর্থনীতিও লাভ করবে বাড়তি গতি। স্থান নির্বাচন থেকে শুরু করে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনা কঠিন হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা চাই, সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার আগে বিদ্যুৎ কমানোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিক। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যদি কোন কোম্পানির বেশি ব্যয় হয়, তবে তাকে অনুমতি না দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাও পরিহার করতে হবে। একই সাথে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |