এক ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সোমবার উপজেলার মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। নির্যাতিত ছাত্র নাইম ইসলাম স্কুলটির নবম শ্রেণির ছাত্র। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোল্লা হাসান ইমাম ফারুক ওরফে সুমন তাকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই ছাত্রের। শিক্ষক সুমন শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

এদিকে এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক সুমনের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের সাজাহান আলীর পুত্র নাইমকে রবিবার বিদ্যালয় থেকে জোরপূর্বক বিদ্যালয় ত্যাগের ছাড়পত্র (টিসি) প্রদান করা হয়। কিন্তু নাইম টিসি নিতে অস্বীকার করে ওই স্কুলেই পড়তে চায়।

পরের দিন সোমবার সকাল ৯টায় সে স্কুলে গেলে সহকারী শিক্ষক বাক্কার আলী তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ফাহিমা খাতুনের সাথে দেখা করতে বলেন।

এ সময় নাইম সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে যান। সহকারী প্রধান শিক্ষক তাকে প্রধান শিক্ষক সুমনের সাথে দেখা করতে বলেন। অফিস কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতেই সে কেন বিদ্যালয়ে এসেছে এর কারণ জানতে চান প্রধান শিক্ষক সুমন। একপর্যায়ে নাইম ইসলামের পিঠে ও বাম হাতে বেত্রাঘাত এবং বুকে কিল ঘুষি মারা শুরু করেন প্রধান শিক্ষক সুমন।

এ সময় নাইম অফিস কক্ষের মেঝেতে পড়ে গেলে অফিস কক্ষের দরজা লাগিয়ে নাইমকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকেন প্রধান শিক্ষক। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী ও পিয়ন মিলে নাইমকে দাঁড় করান। এরপর আবারো শুরু হয় নির্যাতন। একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন বিষয়টি জেনে ছাত্রদের সহযেগিতায় নাইমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন।

নাইম ইসলামের সৎ মা রওশন আরা জানান, নাইমের মা মারা গেছে অনেক আগেই। কিন্তু নাইমকে তিনি নিজের ছেলের মতো করে মানুষ করছেন। সোমবার সকালে সে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন তার ওপর নির্যাতন চালান।

স্কুলের স্টুডেন্ট ক্যাবিনেটের প্রধান রিফাত হাসান জানান, প্রধান শিক্ষক সুমন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে অত্যন্ত দাপটের সাথে স্কুলে প্রভাব খাটান। তিনি কারণে-অকারণে বহু ছাত্রকে টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগে দুই ছাত্রকে তিনি ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। একজন ছাত্রকে তিনি গতবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি।

রিফাত আরো জানান, স্কুলের এক শিক্ষকের প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ওই শিক্ষকের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন প্রধান শিক্ষক সুমন। পরে সেই টাকা নিজের পকেটেই পুরেন তিনি। এই খবরটি গোপন থাকলেও নাইম বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়েছে- এ ধারণার ভিত্তিতেই তাকে জোরপূর্বক টিসি দেয়া হয়। কিন্তু টিসি নিয়ে বিদ্যালয় পরিত্যাগে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে নাইমকে নির্যাতন করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার রাহেদুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকায় আছেন। তিনি অফিসে আসলেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোল্লা হাসান ফারুক ইমাম সুমনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের দুটি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031