ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে । এ জন্য আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে এই মেশিনগুলো ব্যবহার করা হবে। সেখানে এর ব্যবহার সফল হলেই পরের সিদ্ধান্ত হবে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির ঘোর আপত্তি আছে। তাদের দাবি, এই মেশিনে ভোট নিয়ে কারচুপি করা সম্ভব। তবে আওয়ামী লীগ চাইছে, ভোট নেয়া হোক ইভিএমে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এতদিন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট না নেয়ার ইঙ্গিতই দেয়া হয়েছে। তবে আজ সোমবার প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আগারগাঁওযের নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এই কথা জানান।
ইসি সচিব বলেন, ‘আসন্ন যে সমস্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে নির্বাচনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ভোটারদের আস্থা অর্জন করলে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এর ব্যবহারের চিন্তা করছে কমিশন।’
বাংলাদেশে ইভিএম চালুর উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিল রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং পরে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পর দুর্বলতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর রকিব কমিশন আর এ পথে পা বাড়ায়নি।
সেই ইভিএম মেশিন তৈরি করেছিল বুয়েটের একটি দল। তাতে এক ব্যক্তির পক্ষে একাধিক ভোট দেয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন দেশের বাইরে থেকে মেশিন আমদানি করেছে। সদ্য সমাপ্ত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর ব্যবহার হয়েছে এবং সেখানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। বরং ব্যালটে ভোট নেয়ার বদলে ইভিএমে ভোট নেয়ার পর দ্রুত ফল ঘোষণা করা গেছে।
নির্বাচনী আইনে সাত সংশোধনী
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন-আরপিওর সাতটি সংশোধনীর প্রস্তাব এসেছে বলেও জানান ইসি সচিব।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে নির্বাচনী আইন ও বিধি সংস্কার করার জন্য একটি কমিটি আছে মাননীয় নির্বাচন কমিশনার কবিতা বেগমের নেতৃত্বে নির্বাচনী আইন ও বিধি সংস্কারের জন্য কমিটি এই সংশোধনের প্রস্তাব করেছে।
হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আগামী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
তবে কোন সাতটি বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাননি ইসি সচিব। একদিনের বদলে একাধিক দিনে ভোট নেয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে কথা বলেছেন, সে বিষয়ে আরপিওতে কোনো সংশোধনী আসছে কি না, সেটাও জানাননি তিনি।
সচিব বলেন, ‘কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের জানতে পারবেন কী কী পরিবর্তন আসছে।’
‘১৯৭২ সনের যে আইন বর্তমানে ইংরেজিতে আছে সেটা বাংলায় সংস্করণের জন্য প্রস্তাব এসেছে। কমিশন বলেছে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। তাই আরেকটা দিন সময় নির্ধারণ করেছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে সংশোধনীর প্রস্তাবগুলো ওনারা নীতগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’
‘একটি দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে’
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ‘নাগরিক আন্দোলন’ এর নিবন্ধন কেন বাতিল হবে না, সে বিষয়ে দলটিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে বলেও জানান ইসি সচিব।
হেলালুদ্দীন বলেন, ‘৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। এর পর তারা আরও সময় বাড়ানোর আবেদন করলে আমরা (ইসি) আরও ১৫ দিন সময় বৃদ্ধি করেছিলাম।’
‘এর মধ্যে ৩৮ টি রাজনৈতিক দল তারা তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। একটি রাজনৈতিক দল গণফোরাম তারা ছয় মাসের সময় চেয়েছে। কমিশন বিস্তারিত আলোচনা করে তিন মাসের সময় দিয়েছে।’
‘ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন নামের একটি রাজনৈতিক দল কোন প্রতিবেদন দাখিল করেনি। আর সময় বাড়ানোর আবেদনও করেননি। এই দলকে কেন নিবন্ধন বাতিল করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দিলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে।’
‘নিবন্ধনের জন্য বিবেচনায় নতুন ৫৬ দল’
নতুন দল হিসেবে নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর যে ৭৫ টি দল আবেদন করেছিল, তার মধ্যে ১৯ টি বাতিল হয়েছে যথাযথভাবে আবেদন না করায়।
বাকি ৫৬ টি আবেদন নিয়ে কমিশনের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ইসি সচিব। বলেন, ‘এ দলগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে দলগুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।’
‘আমাদের এই মাসের মধ্যেই সময় শেষ ছিল। কিন্তু আগামী মাসের ১৫ (এপ্রিল) তারিখের মধ্যে নতুন দলের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’