ঢাকার শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কারপার্কিং এলাকায় অনেক মানুষের ভিড়। সবার দৃষ্টি আকাশপানে। ঘড়ির কাঁটা চারটা ছুঁতে আরও কিছুটা বাকি।কখন দেখা যাবে কাঙ্ক্ষিত বিমানটি। নেপাল থেকে সেই বিমানে করে আসবে স্বজন-প্রিয়জন-বন্ধু। তবে তারা অভিবাদন গ্রহণ কিংবা জানাতে পারবেন না কাউকে। তারা যে নিষ্প্রাণ। কফিনে বন্দি হয়ে দেশে ফিরছেন তারা ২৩ জন।

ঘড়ির কাঁটা যখন চারটা, ঠিক তখন বিমানবন্দরের আকাশে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ এয়ারক্রাফট (কার্গো)। কারও বুঝতে বাকি থাকে না এটিই সেই কাঙ্ক্ষিত উড়োজাহাজ। তার বুকের ভেতর ২৩টি কফিন, তার ভেতর শুয়ে আছে নেপালের ত্রিভুবনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনরা। বিমানটি দেখামাত্র অনেক স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের কান্না দেখে নিজেদের সংবরণ করতে পারেননি সেখানে উপস্থিত অনেক সাধারণ মানুষও। সবার কান্নায় ভারী হয়ে আসে বিমানবন্দর এলাকার বাতাস।

চারটা ১০ মিনিটের দিকে কফিনবাহী বিমানটি অবতরণ সম্পন্ন করে তার জন্য নির্ধারিত জায়গায় এসে স্থির হয়। এরপর শুরু হয় কফিন বের করার প্রক্রিয়া।

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে ২৩ মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এয়ারক্রাফটটি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বিকাল চারটার দিকে বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ  করে। এর কিছু আগে অবতরণ করে নিহতদের স্বজনদের নিয়ে আসা ইউএস-বাংলার একটি বিশেষ ফ্লাইট।

যে ২৩ জনের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে, তারা হলেন- আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার, শারমিন আক্তার, নাজিয়া আফরিন, এফএইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, খাজা সাইফুল্লাহ, ফয়সাল আহমেদ, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে চারটা ৫০ মিনিটে কফিনগুলো নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামের উদ্দেশে রওনা শুরু করে ৫টা ১০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্সগুলো। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। তাদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে। তার আগে সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে আজ সোমবার সকালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর করে নেপাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সকাল পৌনে নয়টার দিকে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে। সেখান থেকে মরদেহ নেয়া হয় কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে। এই বিমানবন্দরেই গত ১২ মার্চ বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। বিমানের ৭১ আরোহীর মধ্যে চার ক্রুসহ ৫১ জন মারা যান। তাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। ২৩ জনের পরিচয় শনাক্ত হলেও অন্য তিনজনকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

এদিকে কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ছয় বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার বিকালে আহত শাহীন বেপারীকে দেশে ফিরেয়ে আনা হয়েছে।

এর আগে শেহরিন আহমেদ, কামরুন্নাহার স্বর্ণা, মেহেদী হাসান, আলমুন্নাহার অ্যানি ও রাশেদ রুবায়েত দেশে ফেরত আনা হয়েছে। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031