কারাগার প্রধান স্বীকার করেছেন সুরক্ষিত পরিবেশও অপরাধ-মাদকের বাইরে নয় । আর কারাগারে মাদক পাচারে খোদ কারারক্ষীদের একটি অংশের জড়িত থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন তিনি।
২০ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কারা প্রধান। যদিও তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
কারা সপ্তাহ-২০১৮ কে সামনে রেখে রবিবার কারা অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন কারা মহাপরিদর্শক।
বাংলাদেশে মাদকের ব্যাপক বিস্তার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের সদস্যরাও সোচ্চার। মাদকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো বড় আকারের ব্যবস্থা চান প্রধানমন্ত্রী।
নানা সময় পুলিশের অভিযানে পাচারকারী বা মাদকাসক্তরা ধরা পড়লেও তাতে মাদকের বিস্তার এতটুকু কমছে না। কারা কর্তৃপক্ষের হিসাবে কারাগারে বন্দী তিন জনের এক জনই মাদকে আসক্ত।
বন্দী থাকা অবস্থায় তাদের সংশোধনের কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে না পারায়।
কারা প্রধান বলেন, ‘বর্তমানে কারাবন্দিদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৯৭ শতাংশই মাদকাসক্ত। একটি কারাগারে সাত থেকে আট হাজার বন্দির মধ্যে যদি তিন হাজার বন্দি সবসময়ই চেষ্টা করে মাদক প্রবেশ করানোর জন্য, আর বিভিন্ন শিফট মিলিয়ে যদি ১০০ কারারক্ষী তা ঠেকাতে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে বিষয়টা কষ্টসাধ্য।’
কীভাবে কারাগারে মাদক ঢুকে সে কথাও জানান কারা প্রধান। তিনি জানান, পেঁয়াজ, রশুনের বস্তার ভেতরে পাচারের সময় মাদক ধরা পড়েছে। এর বাইরেও নানা অভিনব নিয়ে যাওয়া হয়।’
‘এসব পন্থা ধরতেও আমাদের সময় লাগে। উন্নত দেশের কারাগারেও শতভাগ মাদক প্রবেশ বন্ধ সম্ভব হয়নি। তারপরও এসব প্রতিরোধে বেশ কিছু কারাগারে লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো বডি স্ক্যানারও বসানো হচ্ছে কারাগারেই।’
মাদকের সঙ্গে কারারক্ষীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলেই বরখাস্তসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘এ পর্যন্ত অন্তত ২০ কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে কারা প্রধান জানান, আগামী ২০ থেকে ২৬ মার্চ কারা সপ্তাহ পালিত হবে। ২০ মার্চ গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এই সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
এবারের কারা সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সংশোধন ও প্রশিক্ষণ, বন্দির হবে পুনর্বাসন’।
সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলের প্রায় ১২৪ বছরের পুরাতন কারাবিধি থেকে বের হচ্ছে বাংলাদেশের কারাগার। ১৮৯৪ সালে প্রণয়নকৃত ব্রিটিশ কারাবিধি থেকে বের হয়ে নতুন বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ কারাবিধিতে প্রবেশ করছে কর্তৃপক্ষ।
নতুন কারাবিধিতে ১৫৯টি আইন রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি আইনের পর্যালোচনা শেষ হয়েছে। সবগুলো আইনের পর্যালোচনা শেষ হলে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারপর মন্ত্রিসভা হয়ে আইনটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে।
সব প্রক্রিয়া শেষ করার মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যেই নতুন কারাবিধি কার্যকর হওয়ার আশা করছেন কারা মহাপরিদর্শক।
সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ‘নতুন আইনের পর কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পুরো প্রক্রিয়া চালু সম্ভব হবে।’
কারা সপ্তাহের পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জনের সাফল্য উদযাপনেও নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।